নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। যেখানে পর্যটন মৌসুমে দেশীবিদেশী পর্যটকরা বেড়াতে যায়।
দ্বীপে পৌঁছতে সমুদ্রগামী জাহাজই একমাত্র ভরসা। পর্যটন মৌসুম কেন্দ্রিক প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই পথে চলাচল করছে কয়েকটি প্রমোদতরণী।
গত ১ নভেম্বর থেকে কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন, এম.ভি ফারহান ও দ্যা আটলান্টিক ক্রুজ চলছে। এরপরে প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে যুক্ত হয় বে-ক্রুজার। কেয়ারি সিন্দাবাদ প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও এখনো চলাচল শুরু করেনি।
তবে, আবহাওয়াজনিত কারণে ৭ নভেম্বর থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। সতর্ক সংকেত নেমে আসায় সেন্টমার্টিন আটকে থাকা পর্যটকরা সোমবার গন্তব্যে ফিরেছে।
এদিকে, পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের জাহাজগুলোতে প্রচুর যাত্রীর ভিড় লক্ষ্যণীয়। সীমাবদ্ধতা থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের কারণে চাহিদার দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের অভিযোগ রয়েছে সমুদ্রগামী জাহাজগুলোর। বিশেষ করে, ভরা পর্যটন মৌসুমে এই অভিযোগ গুরুতর। যে কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেক জাহাজকে জরিমানা গুনতে হয় প্রশাসনের কাছে।
বিশ্লেষকরা বলছে, পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের চলাচলের প্রয়োজনে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে আরও দরকার অন্তত তিনটি জাহাজ। এতে করে জাহাজগুলোর অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের চাপ কমবে। নিরাপদে গন্তব্যে ফিরবে পর্যটকেরা। পোহাতে হবেনা প্রশাসনিক ঝাক্কিঝামেলা।
প্রয়োজনীয়তা, নিরাপত্তা, ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ আনুষাঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে এ পথে আরো কিছু জাহাজ অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
অভিযোগ রয়েছে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে জাহাজের সংখ্যা কম হওয়ায় অতিরিক্ত টিকিট মূল্য গুনতে হয় যাত্রীদের। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও টিকিটের দাম বেশি হওয়ায় অনেক পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।
নৌযানের পরিমাণ বাড়লে যাত্রীসেবাও বাড়বে। সেই সাথে সমুদ্র তরণী নিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যও কমবে বলে মনে করছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ এম.ভি পারিজাত ও দোয়েল পাখি-১ঃ
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি নাগাদ ভরা পর্যটন মৌসুম। এই সময়ে সাগর থাকে শান্ত। শীতের মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে পর্যটকদের প্রয়োজনের যুক্ত হতে পারে এম.ভি পারিজাত ও দোয়েল পাখি-১ যাত্রীবাহী সী ট্রাক।
এগুলো নদীপথের জন্য তৈরি হলেও শান্ত সাগরে চলাচলের উপযুক্ত বলে জানিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
যেমন, এম.ভি ফারহান ক্রুজ নদীপথের জাহাজ হলেও দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সাগরপথে চলছে।
টুয়ার ফাউন্ডার মুফিজুর রহমান মুফিজ জানান, টেকনাফ-সেন্টমার্টিনগামী যাত্রীর তুলনায় নৌযানের সংখ্যা খুবই কম। যে কারণে পর্যটন মৌসুমে জাহাজগুলো অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করে। পর্যটকদের চাপে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। নিরাপদ যাত্রী সেবা বৃদ্ধি ও পর্যটনের প্রয়োজনে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে আরো কয়েকটি জাহাজ দরকার বলে মনে করেন এই পর্যটন ব্যবসায়ী। এতে করে চড়া দামে টিকিট বিক্রিকারী জাহাজগুলোর দৌরাত্ম্য কমবে বলে মনে করেন মুফিজুর রহমান।
এদিকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের গোড়াচাঁদ রোডের মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের মালিক অহিদুজ্জামানের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং বরিশালস্থ ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনের আলোকে এম.ভি পারিজাত (এম ০১-১১২১) যাত্রীবাহী (সী ট্রাক) নৌযানটিকে বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট, ইলিশা-পাতারহাট নৌপথে চলাচল ও যাত্রী পরিবহনের নিমিত্তে সার্ভে সনদের মেয়াদ পর্যন্ত আংশিক উপকূল অতিক্রম করতে ২০২০ সালের ৩১ মে পর্যন্ত অনুমতি প্রদান করেছেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার মোঃ মঞ্জুরুল কবির।
একইভাবে, মেসার্স পাতারহাট শিপিং লাইসেন্সের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং ঢাকাস্থ ইঞ্জিনিয়ার শিপ সার্ভেয়ার কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনের আলোকে এম.ভি দোয়েল পাখি-১ (এম-০১-১৬৬৯) যাত্রীবাহী (সী ট্রাক)নৌযানটি বরিশাল-পাতারহাট- ইলিশা-মজু চৌধুরী হাট নৌপথে চলাচল ও যাত্রী পরিবহনের নিমিত্তে সার্ভিসের মেয়াদ পর্যন্ত উপকূল সীমা অতিক্রম করার অনুমতি প্রদান করেছেন।
জাহাজটির মালিক মোঃ রুহুল আমিন সরদার বলেন, প্রথম শ্রেণীর ফিটনেস সম্বলিত আমার জাহাজটি শান্ত সাগরে চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ উপযুক্ত। বিষয়টি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেন। যা সার্ভে রিপোর্ট স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে।
মোঃ রুহুল আমিন সরদার আরো বলেন, এম.ভি দোয়েল পাখি-১ ডাবল বোটামের। এটি ২০১৮ সালে নির্মিত পর্যটকবান্ধব সী ট্রাক। ২ ইঞ্জিন ও ৬০০ বিএইচপি ক্ষমতা সম্পন্ন প্রমোদ তরণী, যা সাগরে চলাচলকারী অন্যান্য জাহজাসমূহের মধ্যে নেই বলে তিনি দাবী করেন।
সেই হিসেবে আগামী ২০২০ সালের ২০ মে পর্যন্ত চলাচলে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মীর্জা সাইফুর রহমান।
এম.ভি পারিজাত ও দোয়েল পাখি-১ নামের সী ট্রাক দুটিতে লাইফবয়া, লাইফ জ্যাকেট, লাইফ রেফট, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম স্বয়ংসম্পূর্ণ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এই দু’টি জাহাজ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে চলাচলের সুযোগ পেলে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উপকৃত হবে।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমারের উপকূলের ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্রপ্রেমিদের কাছে এটি ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। বিখ্যাত লেখক, কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ নামের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি দ্বারা এই দ্বীপটির পরিচিতি আরো বেড়ে যায়।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে বেড়েছে পর্যটকবাহী জাহাজের চাহিদা
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে