নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আতঙ্ক কেটে গেলেও থেমে থেমে বৃষ্টি এখনো অব্যাহত রয়েছে। দুই দিন ধরে বৈরী আবহাওয়া ও সতর্ক সংকেত থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল শুরু হয়নি। ফলে প্রায় ১২০০ পর্যটক দ্বীপে এখনো আটকে রয়েছে।
তবে, সোমবারের মধ্যে আবহাওয়া পুরোপুরি শান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, ৭ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে আটকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় হোটেল-মোটেল মালিকরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছেন।
পর্যটকদের সর্তকতার সাথে সৈকতে ঘোরাফেরা করতে মাইকিং করেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ।
ইউপি সদস্য হাবিব খানের নেতৃত্বে টিম বিভিন্ন হোটেল ও আশ্রয় কেন্দ্রে আটকে পড়া পর্যটকদের কাছে গিয়ে সতর্কতার সাথে সৈকতে বেড়ানোর আহ্বান জানান।
দূর্যোগ না কাটা পর্যন্ত হয়রানিমুক্ত আতিথেয়তা দিতে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা আছে। পর্যটকদের আতংকিত না হতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহম্মদের মতে, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল কয়েকটি হোটেল রয়েছে। কঠিন দূর্যোগ বা জলোচ্ছ্বাস হলেও আটকে পড়া পর্যটকদের বিচলিত হবার কিছু নেই। সংকেত বাড়লে আমরা তাদের এসব উঁচু ভবনে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করব।
দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের হোটেল ও খাবার বিল ডিসকাউন্ট দিতে সব হোটেল-মোটেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে দ্বীপে বৃষ্টি ও বাতাস বেড়েছে। এজন্য রুম থেকে বের হতে পর্যটকদের নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া দ্বীপের চারদিকে সমুদ্র সৈকতে যাতে কোনো পর্যটক না নামেন, সেজন্য পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। যারা প্রথমবারের মতো সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে এসেছেন, তাদের মধ্যে কিছু লোকজন ভয়ে আছেন বলে শুনেছি। তবে পর্যটকদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।’
সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আজমীর ইলাহি বলেন, ‘দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।’
টুয়াকের সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, সেন্টমার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদ রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছি। আবহাওয়া স্বাভাবিক ও সাগর শান্ত হলে জাহাজ পাঠিয়ে পর্যটকদেরকে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে। সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পর্যটকদের অনুরোধ করেন টুয়াক নেতা তোফায়েল আহমদ।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়জনিত সতর্ক সংকেত নেমে আসার পর কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলগুলোতে অবস্থান নেয়া পর্যটকেরা সমুদ্রে নামতে দেখা গেছে। আর এসব পর্যটকদের খোঁজ খবর নিতে মাঠে নামলেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
রবিবার বিকালে তিনি
পরিদর্শনকালে তাঁকে পর্যটকেরা জানান, উপকূলীয় এলাকায় সিগন্যাল দেওয়ার কথা অনেক শুনেছেন, সিগন্যাল দিলে সাগর কেমন থাকে, স্থলের দূর্যোগকালীন আবহাওয়া তা তারা কোনদিন দেখেননি। এজন্য এ বিষয়ে পর্যটকদের বেশ কৌতুহল ছিলো। এবার কক্সবাজার বেড়াতে এসে তারা তা প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষন করে বেশ আনন্দ উপভোগ করেছেন। পরিদর্শনের সময় তিনি পর্যটকদের বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ও আনন্দে সৈকতে ঘুরাঘুরি করতে দেখেন বলে জানান। ডিসি মোঃ কামাল হোসেন এসময় পর্যটকদের সাগর উত্তাল থাকাবস্থায় সাগরে গোসল করতে না নামতে এবং রাতে সৈকতে না থাকতে পরামর্শ দেন। তিনি বীচকর্মী, রেসকিউ টিম, টুরিস্ট পুলিশ সহ দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি করার নির্দেশ দেন।
দেখা গেছে, সোমবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবকটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা।
লাইফ গার্ড কর্মীরা সার্বক্ষণিক পর্যটকদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ অবস্থায় সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। লাল পতাকা এবং লাইফ গার্ড কর্মীদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তাল সাগরে গোসল করছে পর্যটকরা।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দায়িত্ব থাকা সী-সেইভ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ মোহাম্মদ চিরু বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি হওয়াতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে এসেছে। এছাড়াও সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় তারাও কক্সবাজার সৈকতে ভিড় করছে। ফলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই মুহুর্তে যেহেতু ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। তাই আগত পর্যটকদের নিজেদের সচেতন হওয়া খুবই জরুরি বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে পর্যটকদের নিষেধ ও সচেতন করা হচ্ছে। তবে কেউ এই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। অসতর্ক অবস্থায় সৈকতে গোসল করছে। তবে আমরাও চেষ্টা করছি তাদের নিরাপত্তা দেয়ার।
এদিকে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পানিতে না নামা এবং সতর্কতার সাথে বেড়ানোর জন্য মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসক।
শনিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ট্যুারিস্ট পুলিশ পর্যটকদের উদ্দেশ্যে এই মাইকিং করেন।
এছাড়া হিমছড়ি, ইনানী এবং টেকনাফ সমুদ্র সৈকতেও একই রকম মাইকিং করা হয়।
কেটে গেছে ‘বুলবুল’ আতঙ্ক, নিরাপদে আছে পর্যটকেরা
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে