এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া :

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা যুবক তানজিনুল ইসলাম (২৮)। অর্থনীতি বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে তিনি চাকুরী করছেন একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পরও তিনি সরকারী চাকুরীর দিকে না গিয়ে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে। পরে পার্বত্য জেলা বান্দবানের লামা উপজেলার ফাইতং এলাকায় ২.৫০ একর জমি বর্গানিয়ে ১০ মাস পূর্বে শুরু করেন পেঁপে চাষ। এতে তাঁর ব্যয় হয়েছে প্রায় তিনলাখ টাকা। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে উন্নত জাতের আট’শটি রেডলেডি পেঁপে গাছ। সাধারণত এ জাতের পেঁপে মজাদার ও সু-স্বাদু হওয়ায় বাজারেও এর কদর অন্যান্য জাতের পেঁপের চেয়ে বেশি। দক্ষ পরিচর্চা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বর্তমানে তার পেঁপে বাগানে এসেছে বাম্পার ফলন। ফলে প্রথম বছরেই খরচের চেয়ে তিনগুন লাভের আশা করছেন তিনি। আর পেঁপে চাষ করে আশাতীত সাফল্যে দারুণ খুশি যুবক তানজিনুল ইসলাম ও তার পরিবার।

সফল পেঁপেঁ চাষী শিক্ষক তানজিনুল ইসলাম বলেন, মধ্যযুগের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিলো কৃষি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষ বিভিন্ন প্রযুক্তির উপর নির্ভর হয়ে উঠলেও এখনো দেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। বর্তমান সরকার জিডিপি বৃদ্ধি ও দেশের অর্থনীতির চাঁকা সচল রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি খাতের উপর ব্যাপক জোর দিচ্ছে। কৃষির উন্নয়নে সরকারের নানা উদ্যোগ ইতোমধ্যে তরুণদের কাছেও ব্যাপক সাঁড়া ফেলেছে। সরকারে এসব উদ্যোগের কথা জেনে উৎসাহিত হওয়ার পর ওয়াহিদুল ইসলাম নামে এক বন্ধুকে সাথে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। পরে বন্ধুর সহায়তায় শিক্ষকতার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করার উদ্যোগ নিই। তারই অংশ হিসেবে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে “আমাদের বাগান” নামের একটি প্রকল্প গ্রহন করে বানিজ্যিকভাবে করা হয় সমন্বিত পেঁপে চাষ। দক্ষ পরিচর্চা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বর্তমানে পেঁপে বাগানে এসেছে বাম্পার ফলন। ফলে প্রথম বছরেই খরচের চেয়ে তিনগুন লাভের আশা করছেন তিনি।

তানজিনুল ইসলাম আরও বলেন, অর্থনীতি বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে একটি বেসরকারী স্কুলের শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করার পরও কোন কর্মকে ছোট না ভেবে অর্থনৈতিকভাবে নিজেকে স্বালম্বী করতে বাণিজ্যিকভাবে এ পেঁপে চাষ করার সিদ্বান্ত নেন। তার এ উদ্যোগ শিক্ষিত বেকার যুবকদের আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।

সফল পেঁপে চাষী শিক্ষক তানজিনুল ইসলাম বলেন, রেড লেডি পেঁপে মজাদার ও সু-স্বাদু হওয়ায় বাজারে এ জাতের পেঁপের চাহিদা অন্যান্য জাতের পেঁপের চেয়ে বেশি। রেড লেডি জাতের পেঁপে গাছ সর্বোচ্চ ১০ ফুট লম্বা হয় এবং ৭-৯ মাসের মধ্যেই ফলন আসে। উচ্চতা ৬০-৮০ সেন্টিমিটার হলেই গাছে ফল ধরা শুরু করে। এ জাতের পেঁপে গাছে ৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসার পর প্রতিটি গাছে ৫০-১২০টি পর্যন্ত ফল ধরে। পেঁপে গুলোর সাইজও বেশ বড় হয়। একেকটি ফলের ওজন দেড় থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। লাল ও সবুজ রঙ্গের এ রেড লেডি পেঁপের মাংস বেশ পুরু, গাঢ় ও লাল। রেড লেডি জাতের পেঁপে স্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত হয়।

চকরিয়া উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, তানজিনুল ইসলাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তার কর্মের মাধ্যমে বর্তমান সময়ের যুব সমাজকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। সাধারণত: এ ধরনের উদ্যোগ খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। কোন কর্মকে ছোট না দেখে নিজেকে স্ববলম্বী করে গড়ে তুলতে তানজিনুল ইসলামের এ ধরনের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। তিনি একজন সত্যিকারের তরুণ উদ্যোক্তা।

যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, চকরিয়াকে সমৃদ্ধশালী উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে উপজেলা যুব পরিষদকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে চকরিয়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। প্রশিক্ষিত যুবক তানজিনুল ইসলামের এ উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে চকরিয়ার হাজারো যুবক নিজেকে স্বাবলম্বী করতে নতুন স্বপ্ন দেখছেন বলেও জানান তিনি।