শফিক আজাদ,উখিয়া :
লিগ্যাল এইড সার্ভিস সংস্থার পরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেছেন, জেলায় নয়, উচ্চ আদালতেও আইনী সহায়তা দিচ্ছে লিগ্যাল এইড। বিনা খরচে জনগণকে আইনী সহায়তা দিচ্ছে সরকার। কেবল আদালতে গেলেই সমাধান নয়। গ্রামেগঞ্জেও জটিল সমস্যার সমাধান করা যায়। সেজন্য সবাইকে আন্তরিক হওয়া দরকার।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন (এন.এল.এ.এস.ও) এবং কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির (ডিএলএসি) যৌথ আয়োজনে সাংবাদিকদের কর্মশালায় মোঃ আমিনুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সোমবার (৪ নভেম্বর) উখিয়ার ইনানী রয়েল টিউলিপ আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে সভায় প্রধান অতিথি আরো বলেন, শুধ আদালত নয়, সমস্যা সমাধানের জন্য সবার সদিচ্ছা থাকা দরকার। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে। যে যার অবস্থানে দেশকে নিয়ে ভাবতে হবে।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা -ইউএনডিপির কমিউনিটি রিকভারি এন্ড রেজিলেন্স প্রকল্পের অধীনে আয়োজিত কর্মশালায় উখিয়া এবং টেকনাফের প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক অংশ গ্রহণ করে।
‘কেস রেফারেল মেকানিজম কার্যকরীকরণে সাংবাদিকদের ভূমিকাথ শীর্ষক কর্মশালার শুরুতে জাতীয় লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রমের উপর ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করা হয়।
ইউএনডিপির প্রকল্প কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী জজ কাজী ইয়াসিন হাবিবের উপস্থাপনায় ডকুমেন্টারীতে জানানো হয়, দুর্বল, অসহায়, নিপীড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২০০০ সালে সরকার লিগ্যাল এইড সেবা চালু করেছে। ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিথ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যাতে মামলার আগেই সমাধান করা যায়। নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে আইনী সেবাকে তৃণমূলে পৌঁছাতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। লিগ্যাল এইডের সেবা প্রাপ্তিতে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে ১৬৪৩০ নাম্বারে অভিযোগ করা যাবে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন -আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগের উপ সচিব এস. মোহাম্মদ আলী, ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন (এন.এল.এ.এস.ও) প্রকল্পের উপপরিচালক (যুগ্ম জেলা জজ) আবিদা সুলতানা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপির প্রকল্প কর্মকর্তা মাসুদ করিম।
কর্মশালায় কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সেবা কার্যক্রমের উপর সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্য।
তিনি তথ্য দেন, ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত চলমান মামলার সংখ্যা ১০৮০ টি। নিয়োজিত আইনজীবী ২৩৪ জন। মোট ৬৭৭ আবেদন থেকে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ৩১০ টি। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৪৩ টি। আইনী পরামর্শ নিয়েছে ১০০ জন।
জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি বর্তমানে ৪ টি উপজেলার ৩১ টি ইউনিয়নে কাজ করছে। আগে ইউনিয়ন কমিটি সমূহের কার্যক্রম শূন্য হলেও গত জুন মাস থেকে ইউনিয়ন কমিটি সমূহের কার্যক্রম বেশ সক্রিয় হয়েছে। তবে, জেলা লিগ্যাল এইড অফিস কিছু প্রতিবন্ধকতারও সম্মুখীন।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের তথ্যে বলা হয়েছে, সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাব। ইউনিয়ন পর্যায়ে এখনো সব কমিটি গঠিত হয়নি, অনেকগুলো অকার্যকর। কমিটির সদস্যদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব। ইউনিয়ন পর্যায়ে যথাযথভাবে তথ্য সংরক্ষণ না করার কারণে জাতীয় আইনগত সহায়তা কার্যক্রম প্রকৃত চিত্র প্রতিফলনের অভাব। প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার বাইরে বিকল্পভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি এবং এর সুফল সম্পর্কে জনগণের স্বচ্ছ ধারণার অভাব। আপোষ নামার আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকা। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। অনুষ্ঠানে ইউএনডিপির ন্যাশনাল কনসালটেন্ট মানিক বিশ্বাস, ওয়াহিদ হোসাইন, তনুশ্রী সাহাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।