মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

২০১৯ সালে কক্সবাজার জেলার এইচএসসি পরীক্ষার সামগ্রিক ফলাফল বিপর্যয়ে মন খুবই ভারাক্রান্ত। ফলাফল বিপর্যয়ের সঠিক কারণ নির্ণয় করে আগামীতে কি করে ভাল ফলাফল করা যায়, সেজন্য সঠিক পদ্ধতি বের করতে হবে। শনিবার ২ নভেম্বর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে এইচএসসি পরীক্ষা ২০১৯ এর ফলাফল পর্যালেচনা ও মানসম্মত শিক্ষা বিষয়ে জেলার কলেজগুলোর অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন মনের এই আকুতি প্রকাশ করেন।

মতবিনিময় সভায় অধ্যক্ষ ও শিক্ষকেরা বলেন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রভাবশালীদের চাপের মুখে পড়ে কলেজ অধ্যক্ষরা টেস্ট পরীক্ষায় অধিকাংশ বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদেরকেও ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম ফিলাপ করাতে বাধ্য হয়ে পড়েন। আর তার দায়ভার পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর। ফলাফল বিপর্যয়ের কারণের মধ্যে এটি হচ্ছে প্রধান কারণ। অধ্যক্ষ ও শিক্ষককেরা বলেন, কলেজ পরিচালনা কমিটি থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালীদের এমন অনৈতিক চাপ থেকে তারা নিস্তার পেতে চান।

শিক্ষাবান্ধব জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। মানসম্মত ও বাস্তবমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছোটখাট সমস্যা এড়িয়ে আমাদের সমানে এগিয়ে যেতে হবে।

ঘোষিত ফলাফল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পর্যালোচনার পর শনিবার মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ আমিন আল পারভেজ বলেন, শিক্ষার বিনিয়োগের মতো উৎকৃষ্ট আর কোনো বিনিয়োগ হতে পারে না। তবে শিক্ষাকে অবশ্যই মানসম্মত করতে হবে। এ প্রজন্মকে মানসম্মত শিক্ষা দিয়ে উচ্চতায় তুলতে হবে গোটা জাতিকে। যে শিক্ষা জাতি এবং দেশকে করতে পারে আলোকিত।

সম্প্রতি ঘোষিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় ঘটেছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কলেজগুলোতে। চকরিয়ার বদরখালী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আলতাফ হোসাইন ফলাফল বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলেন-তাঁর কলেজের গত ১০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে। পাশ-ফেল বিবেচনা না করেই শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ করার কারণেই মূলত এমন বাজে ফলাফল আমাদের বরণ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো শিক্ষকই একজন ছাত্রের খারাপ ফলাফল আশা করে না। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের মুখে ফেল করা ছাত্রকেও পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে তাদের বাধ্য করা হয়। এমন অবস্থা কাটিয়ে উঠা না গেলে পরিস্থিতি দিন দিন আরো বেশী খারাপ হবে বলেও তিনি জানান।

চকরিয়ার উপজেলার ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ জানান, ৩২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০২ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ইংরেজী বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ১৪০ জন পরীক্ষার্থী। পাশ করেছে মাত্র ২৩ জন। তিনি জানান, কলেজটি নানা সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে।

রামু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হক তার কলেজের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন-আমার কলেজের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আমরা ধরে রাখতে পারছি না। ক্লাস না করেই শিক্ষার্থীরা পালিয়ে গিয়ে কোচিং করতে যায়। কলেজের বাইরে অনেকেই কোচিং ক্লাস নিয়ে বসেন কলেজের ক্লাস চলাকালীন সময়ে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হকের এমন বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জানতে চান-এজন্য দায়ি কে বা কারা?

চকরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আ.ক.ম গিয়াসুদ্দিন বলেন, সকালে কোচিং বন্ধ রাখা দরকার। কেননা সকালে কলেজের ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোচিং করার জন্য যাতে ছাত্ররা ক্লাস ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে। উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, কলেজটি সরকারি করণ করার পর থেকেই কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। এখন অবস্থা এমনই যে, আমরা সরকারিও নই এবং বেসরকারিও নই।

অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ.কে.এম ফজলুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম, হ্নীলা মঈনুদ্দিন কলেজ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ইউনুস বাঙ্গালীসহ আরো অন্যান্য কলেজের শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। কক্সবাজার জেলার ২৫টি কলেজের মধ্যে বর্তমানে ১৪টি কলেজেই অধ্যক্ষবিহীন অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক ঘোষিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সবচেয়ে বেশী খারাপ ফলাফল করেছে, চকরিয়া সিটি কলেজ। কলেজটির ১১৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১১ জন পাশ করেছে। পাশের হার মাত্র ৯.৩২। অপরদিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজ সর্বোচ্চ শতকরা ৯৪ জন পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। জেলার বেসরকারি কলেজ গুলোর মধ্যে শতকরা ৭৩ ভাগ এইসএসসি পরীক্ষার্থী পাশ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, টেকনাফের হ্নীলা মঈনউদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ।