প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে সুদূর টেকনাফ উপজেলা হতে আগত ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করার জন্য “চিটাগাং ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব টেকনাফ- (চুসাট)” এর গৃহীত কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এতে চুসাটকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে ‘টেকনাফ সমিতি চট্টগ্রাম’।

চুসাট কর্তৃক গৃহীত এই কর্মসূচির মধ্যে ছিল টেকনাফের শতোর্ধ্ব পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস, সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা সহ প্রতিজন পরীক্ষার্থীকে স্ব-স্ব পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে শহরে ফিরে আসা পর্যন্ত যাবতীয় সাহায্য প্রদান।

তাছাড়া ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদেরকে নিরাপদে হলে অবস্থান করার সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি ফলাফল প্রকাশের পর তা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের অবহিত করার কাজও সম্পন্ন করেছে চুসাট।

পরীক্ষা চলাকালীন এই কর্মসূচির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন চুসাটের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক দিদারুল আলম আকাশ। আর সম্পূর্ণ কর্মসূচী তদারকি করেছেন চুসাটের সভাপতি- জনাব রবিউল আলম রবি এবং সাধারণ সম্পাদক- জনাব নেওয়াজ মোর্শেদ রাসেল। ভর্তি পরীক্ষা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে চুসাট’র প্রচার সম্পাদক মু. ইদ্রিস খান মুরাদ ও আপ্যায়ন সম্পাদক সালাউদ্দীন আজাদের সমন্বয়ে এক বিশেষ ‘রেজিস্ট্রেশন টিম’ গঠন করে চুসাট; যেখানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১০৩ জন ভর্তিচ্ছু তাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে।

চুসাট’র এই বিশেষ সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে চুসাট সভাপতি রবিউল আলম রবি বলেন- “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে সুদূর টেকনাফ থেকে আসা ছোট ভাই-বোনেরা যাতায়াত, অবস্থান সহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। যার প্রভাব পড়ে তাদের পরীক্ষায়ও। তাই, তাদের এই অসুবিধা দূর করার জন্য চুসাট গত বছর থেকে এই কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এবারের কর্মসূচি তারই ধারাবাহিকতা। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা আমাদের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। এ জন্য আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি এবং আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি টেকনাফ সমিতির নেতৃবৃন্দের প্রতি। তাদের সহযোগিতা ব্যতীত এই বিশাল কর্মযজ্ঞ কখনোই সফলভাবে শেষ করতে পারতাম না আমরা। আশা করি তাদের সাহচর্য আমরা ভবিষ্যতেও পাব।”

জনাব রবিউল, ভর্তি পরীক্ষাকালীন এই বিশাল কর্মসূচি আন্তরিকতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল করার জন্য চুসাটের সর্বস্তরের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত টেকনাফ উপজেলার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত হয় “চিটাগাং ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব টেকনাফ-(চুসাট)”। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এসোসিয়েশনটি টেকনাফ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তাদের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হচ্ছে, টেকনাফের গুণীজন সংবর্ধনা, বার্ষিক ইফতার মাহফিল, ইদ পুনর্মিলনী, বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণ, ভর্তি পরীক্ষা কর্মসূচি, ব্লাড ডোনেশন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি ইত্যাদি। ভবিষ্যতে তাদের কর্মসূচি আরো বিস্তৃত হবে বলে এই রিপোর্টারকে জানিয়েছেন এসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

চিরসবুজ, মায়া হরিণ এবং শাটলের ক্যাম্পাস খ্যাত অনিন্দ্য সুন্দর দেশের বৃহত্তম আয়তনের এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চুসাট যেন রচনা করেছে একখণ্ড টেকনাফ। টেকনাফ হতে আগত যেকোন শিক্ষার্থীর পাশে থাকার চুসাট’র এই উদ্যোগ বিমোহিত করে টেকনাফের সর্বস্তরের মানুষকে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা রিফাত হোছাইন নামের হ্নীলা ইউনিয়নের এক শিক্ষার্থী (বি ইউনিটে ২৮ তম পজিশন) চুসাট’র কার্যক্রমে বিমোহিত হয়ে এই প্রতিবেদককে জানান “ঢাবিতে চান্স পাওয়ার পরও আমার মন চাচ্ছে আমি চবিতেই থেকে যাই, চুসাটের ভাইদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি শিখেছি নতুন কিছু।”

টেকনাফ সরকারি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিবিএ আনুষদে ২৮৮ তম স্থান অধিকারকারী মাহফুজ নামের এক শিক্ষার্থীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- “বাসে ওঠার পর থেকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাওয়া, সেন্টার চিহ্নিতকরণ, খাবারদাবার, পরীক্ষার এক ঘন্টা সময়ের সদ্ব্যবহারের দিকনির্দেশনা প্রদান, আবার বাসে করে শহরে নিয়ে আসা সহ অনেক কষ্ট করেছেন বড় ভাইয়েরা। আমিও ভবিষ্যতে চুসাটের হয়ে আমার টেকনাফের ভাইবোনদের জন্য কাজ করতে চাই।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে চুসাট ও টেকনাফ সমিতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা যায়।

তাছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ‘টেকনাফ সমিতি চট্টগ্রাম’র নেতৃবৃন্দ এবং চুসাট’র উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মু. মমতাজ উদ্দীন কাদেরি, ড. আমির হোসেনসহ চুসাট’র সাবেক নেতৃবৃন্দ ভর্তিচ্ছুদের পাশে থেকে উৎসাহ জাগান।

আগামী ৬ নভেম্বর ‘ডি’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর উপজেলা থেকে মোট চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর তালিকা চুসাট’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আহবায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও ‘ফলাফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ’ কমিটির প্রধান জনাব সাইফুল্লাহ মানছুর। ইতিমধ্যে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে- সমসাময়িক বছরগুলোর মধ্যে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীর চান্স হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।