ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
কক্সবাজার শহরের বদর মোকাম এলাকার বাসিন্দা মৌলভী এসএম আতিকুর রহমান।
দীর্ঘ প্রায় ২৬ বছর কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়া জামে মসজিদের খতীব ছিলেন। বর্তমানে বদর মোকাম মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা। মেধা, বুদ্ধি ও পরিশ্রমে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। পৈত্রিক সম্পত্তি ও নিজের সব অর্থনৈতিক অর্জন নিঃশেষ করেছেন পরিবারের পেছনে। ‘পয়সাওয়ালা’ ও ‘মানুষ’ করেছেন সন্তানদের।
কিন্তু, জীবনের শেষ বয়সে এসে তার কাঁধে ভর করেছে দুঃখ যন্ত্রণা। ৭৫ বছরে সস্ত্রীক ঘরছাড়া মাওলানা আতিকের দু’চোখে পানি ছাড়া এখন আর কিছুই নেই। নিজের জন্মদাতা সন্তানের বেপরোয়া মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন। ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। হাসপাতালের বেড থেকে সোজা ছুটে এসেছেন সাংবাদিকদের কাছে। বর্ণনা দেন নিজের সন্তানের হাতে মারধর ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার করুণ কাহিনী। তুলে ধরেন অসহায়ত্বের কথা।
মেজো সন্তান হেলাল উদ্দিনকে ‘কুলাঙ্গার ও সম্পত্তি লোভী’ আখ্যায়িত করে বাঁচার আকুতি করেছেন। নিজের ঘরে ফেরার সহায়তা চেয়েছেন সন্তানের হাতে নির্যাতিত পিতা আতিক উদ্দিন।
তিনি নিজে একা নন, স্ত্রী শাহিদা বেগমসহ হাজির হন গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে। অবলীলায় উন্মোচন করে দেন অবাধ্য ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩৮) এর মুখোশ।
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে দুঃখভারাক্রান্ত মন ও অশ্রুসিক্ত নয়নে সত্তরোর্ধ এই আলেমের দেয়া বর্ণনা আবেগতাড়িত করে সাংবাদিকসহ শ্রুতাদেরও।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন- ছেলে মিজানুর রহমান, কফিল উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, শরফুদ্দিন, মেয়ে সাইমা সুলতানা শিমুল ও নাসরিন সুলতানা।

অবাধ্য পুত্র হেলাল উদ্দিন

পরিবারের সদস্যদের সামনে রেখে মাওলানা এসএম আতিকুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘ ২৬ বছর একটানা কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়া জামে মসজিদের খতীব ছিলাম। এলাকার অনেক প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি আমার কাছে আরবী শিক্ষা নিয়েছে। আমার বয়স ৭৫ বছর। বর্তমানে আমি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টা। সে সাথে বদর মোকাম জামে মসজিদ এবং বদর মোকাম সমাজ কমিটিরও উপদেষ্টা। আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি এবং আমার যা অর্থনৈতিক অর্জন তার সবকিছুই পরিবারের কল্যানের জন্য ব্যয় করেছি।
এই বয়সে এসে আমাকে আজ নিজ অবাধ্য সন্ত্রাসী পুত্রের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে তা আমার জন্য বড়ই কষ্টের। তারপরও আমার সন্ত্রাসী পুত্র হেলাল উদ্দিনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আপনাদের দারস্থ হয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে আলহাজ্ব এসএম আতিকুর রহমান বলেন, ২০১২ সালে আমি যখন পবিত্র হজ পালনে সৌদিআবর গমন করি। তখন আমার শহরের বড়বাজার ও এন্ডারসন রোডের দুইটি মার্কেট এবং বদর মোকার এলাকার নিজের বাড়ি তত্ত্বাবধানের জন্য হেলাল উদ্দিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করি। পরবর্তীতে আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন সে সুকৌশলে মার্কেট ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে। এই টাকা আত্মসাৎ করে সে ক্ষান্ত হয়নি। দিন দিন তার লোভের পরিমান এতই বেশী বেড়ে গেছে, আমার নিজ টাকায় গড়া শহরের বদর মোকার এলাকায় একটি ৫ তলা বহুতল ভবনের অবৈধভাবে আমার কাছ থেকে লিখে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে আমার অবাধ্য সন্তান হেলাল উদ্দিন তার নামে বৈদ্যুতিক মিটার এবং বাড়ির হোল্ডিং নাম্বার নিজ নামে পরিবর্তন করেছে। আমার অন্যান্য সন্তান এবং স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। বর্তমানে আমি শহরের টেকপাড়া এলাকায় ভাড়া করা বাসায় বসবাস করছি।
কান্না জড়িত কন্ঠে বৃদ্ধ পিতা বলেন, আমি বিভিন্নভাবে আমার সন্তানকে বুঝানোর চেষ্টা করলেও কথা না শুনে উল্টো আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। তাই আমি গত ২৭ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত নং-০৪ এ হেলাল উদ্দিনকে আসামী করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করি। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
এর আগে একইভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে চাইলে আমি বাধা দিই। বাধা দেয়ার কারনে হেলাল উদ্দিন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। সে সময় আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক জখম হয়। এ ঘটনায় ২৯ জানুয়ারী হেলাল উদ্দিনকে আসামী করে আমি মডেল থানায় মামলা দায়ের করি। এ ঘটনায় ৩১ অক্টোবর হেলাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
বর্তমানে কারাগারে থাকলেও বাহিরে লালিত সন্ত্রাসীরা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছে।
পিতার অভিযোগ, হেলাল উদ্দিনের উপস্থিতিতে তার সন্ত্রাসী বাহিনী গেল বছরও আমাদের উপর হামলা চালায়। পরিবারের সদস্যদের মারধরপূর্বক ঘর থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে সে আমার ঘরে তার স্ত্রী, শ্বশুর, শ্যালিকা, শ্যালিকার স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন নিয়ে বসবাস করছে।
বিভিন্ন সময়ে অকারনে হেলাল উদ্দিন আমার উপর হামলা চালায়। এই অবস্থায় গত ২৫ অক্টোবর সদর মডেল থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করি। ওই মামলার প্রেক্ষিতে ৩১ অক্টোবর হেলাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পূর্বে আমি আমার পরিবারসহ নিজ বাড়িতে গেলে হেলাল উদ্দিনের সন্ত্রাসী বাহিনী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় আমি এবং আমার সন্তানরা গুরুতর আহত হই।
পুত্রের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজনের কারণ ব্যাখ্যা দেন মাওলানা এসএম আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের পরও এসব ঘটনা কাউকে জানতে দেইনি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাধ্য হয়ে পরিবারিক বিষয়টি প্রকাশ করলাম। বর্তমানে সন্ত্রাসী পুত্র হেলাল কারাগারে থেকেও বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। জেল থেকে জামিনে বের হতে পারলে সে আমাদের উপর আবার হামলা করতে পারে।
এমনকি তার স্ত্রী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন দিয়ে আমাদের পরিবারের নামে নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা করার হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও বৃদ্ধের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে জমি দখলসহ বাবার নগদ টাকা আত্মসাতসহ অসংখ্য অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দরকার মনে করে স্থানীয় বাসিন্দারা।