বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার :
টানা ২২ দিনের সরকারী নিষেধাজ্ঞা শেষে অবশেষে সাগরে নেমেছেন জেলেরা। কার্তিকের ভরা পূর্ণিমায় আশানুরূপ ইলিশ পাওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সিংহভাগ ফিশিং ট্রলার সব ধরণের সরঞ্জামাদি নিয়ে সাগরে মৎস্য আহরণের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আবার অনেক ট্রলার মাঝি-মাল্লাসহ মৎস্য শিকারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় শুক্রবার সকালে। গত ৯ অক্টোবর থেকে যে স্থানে মাছ ধরার ট্রলার বা নৌকাগুলো নোঙর করে রেখেছিল সেসব স্থান যেন বর্তমানে শূণ্য। আর জেলেদের কেউ কেউ মাছ ধরার জাল বোনার কাজ করেছিল, কেউ জোড়াতালি বুনে ঠিক করে কোন রকম নিষেধাজ্ঞার সময় কাটিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ায় মাঝি-মাল্লা, মৎস্য ব্যবসায়ীদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। শুধু মাঝি-মাল্লা কিংবা মৎস্য ব্যবসায়ী নয়, সেই আনন্দ যেন ছুঁয়ে গেছে ইলিশ প্রিয় মানুষদের মনেও। বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (ফিশারী ঘাট) সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে উপরোক্ত তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়-গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য সরকার মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে কক্সবাজারসহ দেশের ইলিশ প্রধান ৮৫টি উপজেলায় ২ লাখ ৩৮ হাজার জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দিয়েছে সরকার। ফিশারী ঘাটে মৎস্য শিকারে যাওয়ার আগ মুহুর্ত্বে কথা হয় শামসুল আলম নামের এক মাঝির সাথে। তিনি জানান-গত ২২ দিন ধরে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারিনি। অন্য কাজ করে কোন রকম পরিবার-পরিজন নিয়ে দু-মুঠো খেয়ে দিনাদিপাত করেছি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারো সাগরে মাছ শিকারে যেতে পেরে আনন্দ লাগছে। অনেকটা একই সুরে কথা বললেন জেলে রবীন্দ্র দাশ। তিনি বলেন-এতদিন নৌকা ও জাল মেরামত করে কোর রকম সংসার চালিয়েছি। তবে আবারও সাগরে মাছ শিকারে যেতে পেরে নিজের আনন্দ লাগছে। কারণ এবার হয়তো স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের ভাল-মন্দ কিছু খাওয়া যাবে। খুরুশকুল রাস্তার ফিশিং ট্রলার মালিক মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন-গত ৯ অক্টোবর থেকে শুরু ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সাগরে মৎস্য আহরনে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা শেষ হয়েছে। শুক্রবার সকালে অন্যান্য ট্রলারের সাথে আমার ট্রলারও সাগরে মৎস্য আহরণে রওনা দিয়েছে। আশা ২/১ দিনের মধ্যে মাছ আহরন করে আবার ফিরে আসবে। কক্সবাজার হাঙ্গর মৎস্য ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু জানান-নিষেধাজ্ঞা শেষে সিংহভাগ ট্রলার বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সাগরে গেছে। বাকীগুলো শুক্রবার সকালে ফিশারী ঘাট ও আশপাশের এলাকা থেকে সাগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বলেন, একসময় অবাধে ইলিশ আহরণের কারণে বছরের প্রায় সময় ইলিশের সংকট থাকতো। তবে সরকার মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, কারেন্ট জাল জব্দ, জাটকা ধরায় কড়াকড়ির কারণে এখন জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করেন তিনি। নিষেধাজ্ঞার সময় সার্বিক সহযোগিতার জন্য কক্সবাজারের সর্বস্তেরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান মৎস্য কর্মকর্তা।
অলস সময় শেষে কর্মচঞ্চল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র , নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাগরে জেলেরা
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।