বিশেষ প্রতিবেদক:
মহেশখালী উপজেলার ভয়ংকর সন্ত্রাসী সালাহ উদ্দীন। চারটি হত্যাকান্ড, ধর্ষণ, অস্ত্র ব্যবসা, মদের কারখানা এবং অসংখ্যা অপরাধের হোতা এই সন্ত্রাসী। এখনো এই সন্ত্রাসী সালাহ উদ্দীন ও তার বাহিনীর দাপটে মহেশখালীর বড়মহেশখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা ছিলো আতঙ্কেও জনপদ। দিন-দুপুরে হত্যা ও ধর্ষণসহ নানা অপরাধ ঘটাতো এই ‘টেরর’ সালাহ উদ্দীনের নেতৃত্বে তার বাহিনী। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ভয়ংকর অপরাধের কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ তালিকায় উঠে তার নাম। এতে জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় সন্ত্রাসী সালাহ উদ্দীন। তাই থিতু হয় কক্সবাজার শহরে। আশ্রয় নেয় ভগ্নিপতি শহরে গাড়ির মাঠের আমিনের কাছে। শহরে থিতু হলেও তার বাহিনীকে জিইয়ে রাখে এবং কক্সবাজার শহরে বসে সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালিত করে। তবে প্রয়োজনে আচমকা এলাকায় গিয়ে সহযোগিদের নিয়ে ঘটায় হত্যাসহ সব ধরণের সন্ত্রাসী কার্যকম। অন্যদিকে কক্সবাজার এসে ছদ্মবেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অগোচরে শুরু করে ইয়াবা ব্যবসা। গড়ে তুলে ইয়াবার সিন্ডিকেট। তার এই সিন্ডিকেটটি টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হয়ে সারাদেশে চালায় ইয়াবা ব্যবসা- বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে বহু বছর পর হলেও তার শেষ রক্ষা হলো না। এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতে গিয়ে এবার পুলিশে জালে আটকা পড়লো এই ভয়ংকর সন্ত্রাসী সালাহ উদ্দীন। গত ২৯ অক্টোবর শহরের একটি হোটেল থেকে ফাঁদ পেতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই অপহরণের ঘটনাসহ দুই নতুন মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে এক আপন ফুফাতো ভাইকে হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসী জগতে পা দেয় সালাহ উদ্দীন। এরপর ক্রমান্বয়ে গড়ে তুলে সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকার খারাপ কিছু লোকজনকে নিয়ে গড়া এই সন্ত্রাসী বাহিনী ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে উঠে। আস্তে আস্তে এই সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্র ব্যবসা, মদের কারখানা, অস্ত্রের মুখে জমি দখল, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড ঘটায়। এভাবে সালাহ উদ্দীনের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী বাহিনী উপজেলা আওয়ামী নেতা দেবাঙ্গাপাড়ার মোঃ ফোরকানের পুত্র দিদারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা, আরেক পুত্র মেম্বার আলমগীরকে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। সিপাহী পাড়ার এক গর্ভবতী মহিলাকে হত্যা এবং দিদারের স্ত্রীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে। অন্যদিকে সিপাহীর পাড়ার পাহাড়ে গড়ে তুলে অস্ত্র তৈরির বিশাল কারখানা, তৈরি মদের কারখানা এবং জমি দখলসহ নানা ভয়ংকর অপরাধ সংঘটিত করে। এসব অপরাধে সালাহ উদ্দীনের বিরুদ্ধে অন্তত ২০ টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, মহেশখালী থানা মামলা নং- ৫/২০১২, নং-১/২০১৩, নং-২/২০০৫, নং-৮/২০০১, নং-২/২০১২, জিআর নং-৯২/২০১১, নং-৯/২০১৫, নং-১১/২০১৫, নং-১/২০০০, নং-৯(১০)/২০০০, নং-৩/২০১২, নং-৯/২০১৫।

তথ্য মতে, সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে এলাকায় তেমন যেতো না সালাহ উদ্দীন। তবে গড়ফাদারের ভূমিকা নিয়ে বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তার নির্দেশনা মোতাবেক তার সেকেন্ড ইন কমান্ড মাহমুদুল করিম, আনচারুল করিমসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা এখনো অস্ত্রের কারখানা, মদের কারখানা এবং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রেখেছে। এর মধ্যে সালাহ উদ্দীন কক্সবাজার থেকে পাঠায় ইয়াবা বড় বড় চালান। এসব ইয়াবা বিক্রি করে তার সহযোগিরা। অন্যদিকে এখনো অক্ষত রয়েছে পাহাড়ে অবস্থিত সালাহ উদ্দীনের বাহিনীর অস্ত্রের কারখানা। সালাহ উদ্দীনকে রিমান্ডে নিলে অস্ত্র কারখানাসহ সব অপরাধের চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করেন।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) মোঃ ইয়াছিন জানান, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সালাহ উদ্দীনকে বুধবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।