ডেস্ক নিউজ:
পাখিদের বাসা ছাড়ার সময় দেয়া হয়েছে ১৫ দিন। এর মধ্যে বাসা না ছাড়লে তাদের বাসা থেকে নামিয়ে দেয়া হবে। এমনকি তাদের বাসা ভেঙেও দেয়া হবে। এমন ঘোষণা শুনে কেউ হয়তো কোনো গল্পের কাহিনি মনে করতে পারেন। কিন্তু এটাই বাস্তব।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে। কয়েক হাজার শামুকখোল পাখি হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগানের পাখির বাসা নিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘কখনোই পাখির বাসা ভাঙা যাবে না।’

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগানে কয়েক হাজার শামুকখোল পাখিকে ১৫ দিনের মধ্যে তাড়িয়ে দেয়া-সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন নজরে আনার পর আদালত এমন মন্তব্য করেন।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘পাখিদের বাসা ছাড়তে সময় দেয়া হলো ১৫ দিন’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বুধবার স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে এমন আদেশ দেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি কোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারুমিতা রায়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার।

সঙ্গে সঙ্গে রুলও জারি করেন আদালত। রুলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামকে কেন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

পাশাপাশি অভয়ারণ্য ঘোষণা করলে ওই আম বাগান ইজারাদারদের কী পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা ৪০ দিনের মধ্যে জানাতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সময় আদালত বলেন, ‘কখনোই পাখির বাসা ভাঙা যাবে না।’

‘পাখিদের বাসা ছাড়তে সময় দেয়া হলো ১৫ দিন’- শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাখিদের বাসা ছাড়ার সময় দেয়া হয়েছে ১৫ দিন। এর মধ্যে পাখিরা বাসা না ছাড়লে তাদের বাসা থেকে নামিয়ে দেয়া হবে। এমনকি তাদের বাসা ভেঙেও দেয়া হবে। এ ঘোষণা শুনে কেউ হয়তো রসিকতা মনে করতে পারেন কিন্তু এটাই বাস্তব। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে। কয়েক হাজার শামুকখোল পাখি এ হুমকির মুখে পড়েছে।’

রাজশাহীর আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান। তার ইজারা নেয়া আম বাগানের গাছে গাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চারা এখনও উড়তে শেখেনি। কিন্তু বাগানমালিক এখন বাগানের পরিচর্যা করতে চান। পাখিপ্রেমীদের প্রতিরোধের মুখে তিনি মঙ্গলবার থেকে পাখিদের জন্য ১৫ দিন সময় বাড়িয়েছেন।

আতাউর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর গ্রামে। তিনি বলেন, সাত লাখ টাকা দিয়ে তিনি এ বাগান দুই বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। গত বছর পাখি থাকার কারণে তার আম নষ্ট হয়েছে। এবার আর তিনি তা হতে দেবেন না। এখনই তিনি আম গাছ পরিচর্যা করতে চান। এজন্য পাখির বাসা ভেঙে গাছে ওষুধ ছিটাতে চান।

স্থানীয় পাখিপ্রেমী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাগানে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। সব বাসায়ই বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাগুলোর উড়তে শিখতে অন্তত আরও এক মাস সময় লাগবে। এর আগে বন অধিদফতর থেকে এ আমগাছের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য একটি প্রকল্প করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে বন অধিদফতরের আর কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পাখিগুলোর বাসা ভেঙে দিলে হাজার হাজার পাখির বাচ্চা মারা পড়বে। এরই মধ্যে বাসা ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেওয়ায় স্থানীয়রা ১০০ পাখির বাচ্চা ধরে নিয়ে গেছে। তিনিসহ কয়েকজন গিয়ে আতাউর রহমানের কাছে আপত্তি জানান। পরে তিনি ১৫ দিন সময় দেন।

খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের ২৫টি আমগাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে। চার বছর ধরে এরা এ বাগানে বাচ্চা ফোটায়। বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে এরা আবার চলে যায়।

বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে এ বাগানের পাশেই সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে, আইন অনুযায়ী যেকোনো বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, শিকার, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানা। এর নিচে বন্যপ্রাণী বিষয়ক যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগের একটি নম্বর দেয়া আছে।