স্পোর্টস ডেস্ক:
সোমবার মধ্যরাত থেকেই তোলপাড়। ফিক্সিং প্রস্তাব পেয়ে সেটা প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিসিকে না জানানোর অপরাধে ১৮ মাসের নিষেধাজ্ঞার শাস্তি পেতে যাচ্ছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ খবর নিয়েই মূলত সারাদিন তুমুল আলোচনা। টক অব দ্য কান্ট্রি। এমনকি শেষ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও কথা বলতে হয়েছে।

আইসিসির অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিটের (আকসু) নিয়ম অনুযায়ী, ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পরও যদি সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের বোর্ড কিংবা আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানানো হয়, তাহলে সে অপরাধে ৬ মাস থেকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞার শাস্তি পর্যন্ত হতে পারে।

সাকিব আল হাসান ‘তথ্য গোপন’ করেছেন- এই অপরাধে বড় শাস্তির মুখোমুখি। কিন্তু খবরে প্রকাশ, তিনি ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন- এ কারণে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ মাস। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো কিছুই জানানো হয়নি।

সবই বাংলাদেশের মিডিয়ার চর্চিত বিষয়। সাকিবের শাস্তি হয়ে গেছে। সাকিব আবেদন করলে, শাস্তি কমানোও হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে এখনও কোনো অভিযোগই গঠন করেনি আইসিসি।

ক্রিকেট সম্পর্কিত জনপ্রিয় অনলাইন ইএসপিএন ক্রিকইনফো আইসিসির বরাত দিয়ে কিছুক্ষণ আগে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, ফিক্সিং প্রস্তাব পাওয়ার পরও সে বিষয়ে কেন আইসিসিকে জানানো হয়নি- এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে আকসু। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাকিবের বিপক্ষে কোনো অভিযোগই গঠন করা হয়নি।

মাত্র এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ গড়ে ওঠা ক্রিকেটারদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ক্রিকেটাররা মাঠে ফিরেছেন, ভারত সফরের জন্য অনুশীলন করেছেন। কিন্তু সাকিব আল হাসান অনুশীলনে উপস্থিত ছিলেন কেবল একদিন। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের একটিও খেলেননি। বিসিবিও এসবের গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেনি।

বাংলাদেশ এখনও তাদের টেস্ট দল ঘোষণা করেনি। টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। সেখানে সাকিবকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসান অধিনায়ক থাকবেন কি থাকবেন না, সে ব্যাপারটা মোটেও নিশ্চিত নয়। ৩ নভেম্বর থেকে ভারতের বিপক্ষে শুরু হবে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সে উদ্দেশ্যে আগামীকালই (বুধবার) বাংলাদেশ দল বিমানে ওঠার কথা।

ক্রিকইনফোর পক্ষ থেকে আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এমনকি আকসু কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আইসিসি কিংবা আকসু- কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। আইসিসি এবং আকসুর একটা নীতি হচ্ছে, তদন্তাধীন কোনো বিষয় সম্পর্কে একটা উপসংহারে না আসা পর্যন্ত ওই বিষয়ে কোনো মন্তব্য কিংবা কোনো কথা বলবে না।

প্রটোকল অনুযায়ী, তদন্ত শেষে আকসু তার ফাইনাল রিপোর্ট আইসিসির সিনিয়র-মোস্ট লিগ্যাল কাউন্সিলের সদস্যকে পাঠায়, এরপর সেই সদস্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তিনি শাস্তি দিয়ে সামনে এগুবেন নাকি শাস্তি দেবেন না। এরপর অভিযুক্ত ব্যাক্তি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি দোষ স্বীকার করবেন নাকি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করবেন। যদি তিনি তার অভিযোগকে গ্রহণ করেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনসম্মুখে প্রকাশের আগে তা অনুমোদনের বিষয়েও একমত হতে হয়।

ক্রিকইনফো জানিয়েছে, যদি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে পুনরায় রায় দেয়ার জন্যে একটি স্বাধীন ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়। এমনকি এমনও ঘটতে দেখা গেছে যে ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে; কিন্তু অভিযুক্ত ব্যাক্তি আর চ্যালেঞ্জ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এর উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কান সনাথ জয়াসুরিয়ার বিষয়টা উল্লেখ করা যায়। যার বিরুদ্ধে আকসু অভিযোগ গঠন করেছিল। তিনি প্রথমে চ্যালেঞ্জ করার ফলে ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়; কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়াসুরিয়া আকসু নীতির অধীনে কোনো এক অপরাধ করেছেন বলে স্বীকারও করেছিলেন।

সাকিবের বিষয়টি আসে বিসিবির এমন এক অস্থির সময়ে, যখন মাত্র এক সপ্তাহ আগেই সাকিব খেলোয়াড়দের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। গত বুধবার যখন বিসিবি খেলোয়াড়দের সকল দাবি মেনে নেয়ার পর সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

এরপর বিসিবি সাকিবের বিরুদ্ধে বোর্ডের নিয়ম ভাঙার অভিযোগ তোলে। কারণ, বিসিবির অনুমোদন ছাড়াই তিনি গ্রামীণফোনের সাথে স্পনসরশিপ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের পাপনের চোখে ছিল যা বেআইনী।

এখান দেখার বিষয় কোথার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়।