প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা!

আহমদ গিয়াস
কক্সবাজার শহরতলীর কলাতলী সাগর তীরে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত কাঁকড়া পোনা উৎপাদনকারী সরকারি হ্যাচারিটি উৎপাদন শুরুর আগেই বন্ধ হওয়ার ঘটনাটি বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরই নড়েচড়ে বসেছে মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের হ্যাচারিটি রাজস্ব খাত চালু রাখার জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাসও পাওয়া গেছে। আগামী মাস থেকে হ্যাচারিটি যাতে চালু করা যায় তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা ও খরচের বিবরণ তৈরি করে অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
সূত্রটি জানিয়েছে, খবরটি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়ার পর তিনি এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্র্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছেন। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তরে জানতে চাওয়া হলে এনিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়।
তবে এসম্পর্কে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু এমপি বলেন, কক্সবাজারের কাঁকড়া পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিটি বন্ধ হয়নি। প্রজেক্ট এর মেয়াদ শেষ হলেও হ্যাচারিটির জন্য রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের ব্লু-ইকোনমি তথা সমুদ্র সম্পর্কিত অর্থনীতির উন্নয়নে বদ্ধ পরিকর। আর তারই লক্ষ্যে কাঁকড়া ও কুচিয়াসহ অপ্রচলিত খাদ্য পণ্য উৎপাদন সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার।
তবে সূত্র জানায়, জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কক্সবাজারের হ্যাচারিটির জন্য জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত চার মাসে রাজস্ব খাত থেকে কোন বরাদ্দ ছিল না।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম খালেকুজ্জামান বলেন, আগেও হ্যাচারিটিতে চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রেষণে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মীদেরই দায়িত্ব দেওয়া হত। এখন রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেলে নভেম্বর থেকে হ্যাচারিটিতে মা কাঁকড়া তোলা যাবে। আর জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত কাঁকড়া পোনা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান (সামুদ্রিক) ও সাবেক কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আবদুল আলীম বলেন, ছোট-বড় কিছুই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি এড়ায় না। তিনি কিছু বিষয় গুরুত্ব দেন আর কিছু বিষয় এড়িয়ে যান। কিন্তু কক্সবাজারে কাঁকড়া পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিটির বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। আশা করা যায়, হ্যাচারিটিতে শীঘ্রই উৎপাদন শুরু করা যাবে।
বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক রমজান আলীও কক্সবাজারের কাঁকড়া হ্যাচারিটির জন্য রাজস্ব খাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান।
দেশে কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ সম্প্রসারণের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্পের অধীনে প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে কক্সবাজারের কাঁকড়া পোনার হ্যাচারিটি নির্মাণ করা হয়। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি শহরতলীর কলাতলী সাগর তীরে অবস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের পিসিআর ল্যাব সংলগ্ন স্থানে এ হ্যাচারিটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ এবং চলতি বছরের ১৪ জুন হ্যাচারিটি উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইসউল আলম মন্ডল। কিন্তু হ্যাচারিটি উদ্বোধনের আগেই গত মে মাসে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক (পরামর্শক) ফিলিপাইনী নাগরিক মিজ এমিলি নিজদেশে ফিরে যান, এরপর আর বাংলাদেশে আসেননি। জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ইতোমধ্যে এ হ্যাচারিতে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োজিত বিদেশী পরামর্শকসহ অন্যান্যদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ফলে উৎপাদন শুরুর আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত প্রায় চার মাস ধরে অচল এ হ্যাচারিটি। প্রায় তিন কোটি বিশ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ হ্যাচারি থেকে প্রতি সাইকেলে বা ২৮ দিন অন্তর ৯০ হাজারটি করে পোনা উৎপাদন করার কথা ছিল।
ভাইরাসসহ নানা রোগব্যাধির কারণে বিপর্যস্ত দেশের চিংড়ি শিল্পের বিকল্প হিসাবে ভাবা হচ্ছিল নরম খোলসের কাঁকড়া চাষকে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় জলাভূমি বা ঘেরে উৎপাদিত নরমের খোলসের কাঁকড়া বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে চিংড়ি চাষিরা ঝুঁকিমুক্ত নতুন এ চাষের দিকে দিনদিন ঝুঁকে পড়ছে। তবে কাঁকড়ার চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠলেও প্রাকৃতিক উৎস থেকে পর্যাপ্ত পোনা পাওয়া সম্ভব না হওয়ায় দেশে কাঁকড়া চাষের কাঙিক্ষত বিস্তৃতি ঘটছে না। এ কারণে হ্যাচারিতে কাঁকড়া পোনা উৎপাদনের উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।