ডেস্ক নিউজ:
সোমবার হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদশের ক্রিকেটাঙ্গন। পারিশ্রমিকসহ মোট ১১ ইস্যুতে দাবি পেশ করেন ক্রিকেটাররা এবং দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেটকেই তারা বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

ক্রিকেটারদের হঠাৎই এই ধর্মঘট ডাকার পরই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। বোর্ড প্রথম থেকেই বলছে, ক্রিকেটাররা তাদের সঙ্গে কোনো আলাপই করেনি। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো আগে পেশ করেনি তারা বিসিবির কাছে।

আজ সকাল থেকেই মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম সরগরম ক্রিকেটারদের ধর্মঘট এবং আলটিমেটাম নিয়ে। দুপুরের দিকে জরুরি বৈঠকে বসেন বিসিবি পরিচালকরা। এরপরই বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

বিসিবি সভাপতি মনে করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। যার অংশ হিসেবে ক্রিকেটাররা আন্দোলনে নেমেছে এবং ধর্মঘট ডেকে খেলা বন্ধ করে দিয়েছে।

ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের ইমেজ এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইমেজ নষ্ট করে দিয়েছে। পাপন দাবি করেন, ক্রিকেটাররা দাবি-দাওয়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি কেন? করলে তো ওদের দাবি আমরা মেনে নিতাম। এখন পর্যন্ত তারা যে সব দাবি তুলেছে, আমরা কোনটা পূরণ করিনি?

তারা আগে আমাদের কাছে দাবিগুলো পেশ না করে মিডিয়ার সামনে বললো। তারা তো জানে, আমাদের কাছে দাবি পেশ করলে আমরা সেগুলো মেনে নেবো। মেনে নিলে তো খেলা বন্ধ করতে পারতো না। এ কারণেই আমাদের না বলে মিডিয়ার সামনে বলেছে।

পাপন দাবি করেন, এতে বাংলাদেশেরই সম্মানহানি হয়েছে। ক্রিকেটের সম্মানহানি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে দাবি না তুলে তারা যে উদ্দেশ্যে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরলো, সে উদ্দেশ্যে আপাতত তারা সাকসেস। এসিসি-আইসিসি থেকে শুরু করে সবাই ফোন করে বলছে, বাংলাদেশের ক্রিকেট নষ্ট হয়ে গেছে। তার মানে, বাংলাদেশের ইমেজ এবং ক্রিকেটের ইমেজ নষ্ট করতে সফল হয়েছে তারা।’

বিসিবি সভাপতি মনে করেন, ক্রিকেটাররা এমন এক সময়ে দাবি তুলেছে, যখন আমাদের সামনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় উপস্থিত। পাপন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই খেলা বন্ধ। এমন এক সময়ে বন্ধ করলো- যখন ফিটনেস এবং ক্যাম্প শুরু করার কথা রয়েছে। নতুন কোচ এসেছে, সামনে ভেট্টরিও আসবে। আমার মনে হয়, ওদের বিদেশি এসব কোচ পছন্দ নয়। তারা তো এমনও বলেছে, কোচই চাই না। এখন চায় দেশি কোচ। কিন্তু তাদের মতো করে তো আমরা কোচ নিয়োগ দিতে পারি না।’

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে ভারতে গিয়ে এখনও কোনো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। এখন যখন প্রথম সিরিজ খেলতে যাবে ক্রিকেটাররা, তার আগ মুহূর্তে এ আন্দোলন। পাপন বলেন, ‘ভারতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজে এই প্রথম যাচ্ছে। এত কষ্ট করে একটি ফুল সিরিজ ভারত থেকে আসলো। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে এবং প্রথম খেলাটাই ভারতের সাথে। অথচ তার আগেই তারা বলে দিলো, আমরা খেলবো না।’

পাপনের কাছে মনে হচ্ছে, এসবই পূর্বপরিকল্পিত। তিনি বলেন, ‘ঠিক এমন সময়টাতেই ধর্মঘট ডেকে ক্যাম্পে যোগ না দিয়ে তারা কি করতে চাচ্ছে, এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার। যা যা জিনিস ওরা চাইলেই পাবে, তবুও আমাদের কাছে আসলো না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এটা পুরোপুরি প্রি-প্ল্যানড। ওরা আমাদের কাছে দাবি না দিয়ে মিডিয়ায় বলেছে। তারা আপাতত সাকসেস। তারা আমাদের কাছে দাবি না দিয়ে আগেই খেলা বন্ধ করেছে। এটা কোনো পূর্বপরিকল্পনার অংশ।’

কখন থেকে এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে? পাপনের ধারণা বিসিবির এক পরিচালক (ক্যাসিনো ইস্যুতে) গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক ডাইরেক্টর এরেস্ট হওয়ার পর থেকেই সবার টার্গেটে পরিণত হয়েছি আমি নিজে এবং আমার বোর্ড। তারা প্রথমে চেষ্টা করেছে নানাভাবে আমাদের ক্ষতি করার। আমাদের আক্রমণ করে যদি বাইরে পাঠানো যায়, বোর্ডকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ওটাতে তারা সফল হয়নি। এখন সেকেন্ড স্টেপ চলছে। যদি কোনোভাবে ভারত সফরটা মিস করা যায়, তাহলে বড় ধরনের একটা সমস্যায় পড়তে পারি।’

পাপনের বিশ্বাস এটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তিনি বলেন, ‘তারা (ক্রিকেটাররা) কেন আমাদের কাছে কিছু না চেয়ে খেলা বন্ধ করলো? ক্যাম্পেও যোগ দেবে না। সবই ষড়যন্ত্রের অংশ। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে।’

পাপনের ধারণা ক্রিকেটাররা সবাই জেনে-বুঝে এ আন্দোলনে যোগ দেয়নি। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটার যারা আছে তাদের বেশিরভাগই ক্রিকেটকে ভালোবাসে এবং দেশকে ভালোবাসে। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও। আমার বিশ্বাস, অধিকাংশ খেলোয়াড়ই জেনে বুঝে যোগ দেয়নি। হয়তো দু-একজন জড়িত। তাদের খুঁজে বের করতে হবে।’