শাহেদ মিজান, সিবিএন:

অশান্ত কালারমারছড়ার কথা দেশজোড়া! ২০০১ সালের বিএনপি জোট সরকার গঠনের পর থেকে সেখানে অশান্তির পদযাত্রা। রাজনৈতিক পক্ষপাত ও গোষ্ঠীগত আধিপত্যের লড়াইয়ের কারণে তৎকালীন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জিয়ার বাহিনী ও যুবলীগ সভাপতি (র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত) ছৈয়দ নূরের বাহিনী দিয়েই চূড়ান্ত অশান্তির পথে ঢুকে পড়ে কালারমারছড়া। এই লড়াইয়ের সূত্র ধরে মরতে হয়েছে কালারমারছড়ার সাবেক চেয়ারম্যান ওসমা গণি ও তার ভাই ছৈয়দ নূরসহ আরো অন্তত ২০ জন মতো মানুষকে। এভাবে বছরের পর পর ধরে কালারমছাড়কে ঘিরে রাখে অশান্তি কালো ছায়া! এর মধ্যে জিয়া বাহিনীর লোকজন এলাকাছাড়া থাকায় গত ইউপি নির্বাচনের আগে কয়েক বছর ধরে স্থিতিতাবস্থা বজায় ছিলো। তবে ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে নতুন মোড় নেয় কালারমারছড়ার অশান্তি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীতা নিয়ে সেলিম চৌধুরী ও তারেক শরীফের মধ্যে তীব্র হয়ে উঠে দ্বন্দ্ব । শেষ পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে নৌকা প্রতীক পান সেলিম চৌধুরী। তবে তাও কাজ দেয়নি তাকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে বিশাল ব্যবধানে তাকে পরাজিত হঠাৎ জনপ্রিয় হয়ে উঠা তারেক শরীফ।

কথিত আছে, নির্বাচনে সেলিম চৌধুরী বিশাল ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় নতুন করে আবার অশান্তি সৃষ্টি হয় কালারমারছড়ায়। পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পারায় সেলিম হিংস হয়ে উঠে- এমন অভিযোগ সব সময় করে আসছে চেয়ারম্যান তারেক শরীফ। সে ধারা মতে সেলিম চৌধুরী সন্ত্রাসীদের সংঘটিত করে তারেক শরীফের নতুন প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। বরাবরই তারেক শরীফ অভিযোগ করে আসছে, সেলিম চৌধুরীর সাথে যোগ দেয় জিয়া বাহিনীর লোকজন; যারা তার বাবার হত্যাকারী। সবাই মিলে তারেক চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বিরদ্ধে লেগে পড়ে। তবে বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করতো সেলিম চৌধুরী।

স্থানীয়রা জানান, গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে সেলিম চৌধুরী ও তারেকের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই তীব্র থেকে তীব্র হয়ে উঠে। এর জের ধরে হত্যাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটেছে প্রতিনিয়ত। এর সর্বশেষ বলী হলো আঁধারঘোনার মিজান নামে একজন। প্রতিপক্ষের গুলিতেই সে মারা যায়। মিজান হত্যার উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রাক্কালেই এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে কাঁধে কাঁধ এবং বুকে বুক মেলালেন চির প্রতিদ্বন্দ্বি চেয়ারম্যান তারেক শরীফ ও সেলিম চৌধুরী। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দু’জনের এই অবিশ্বাস্য মেলবন্ধন দেখা যায়।

বর্ধিত সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘দলের শক্ত ভিত্তি’ তৈরি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। সকল নেতাদের সব ধরণের বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের জন্য কাজ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। বিশেষ করে কালামারছড়া পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে দুই নেতা এ কথাগুলো বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধিতসভার শেষে চেয়ারম্যান তারেক শরীফ ও সেলিম চৌধুরী কাছে ডেকে একতা হওয়ার তাগিদ দেন মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা। দু’জনকে মুখোমুখী করে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা রোধে বেশ কিছু কথা বলেন আনোয়ার পাশা। এক পর্যায়ে দু’জনকে কোলাকুলি করিয়ে দেন তিনি। এসময় দু’জনই ভেদাভেদ ভুলে কাজ করার প্রত্যয় করেন।

এদিকে মুহূর্তের মধ্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে চেয়ারম্যান তারেক শরীফ ও সেলিম কোলাকুলির ছবি। ছবিতে দু’জনকে হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছে। ছবিটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এই ছবি দেখে সাধারণ লোকজন মনে করছেন, তারেক শরীফ ও সেলিম চৌধুরী দ্বন্দ্ব ভুলে মিলে যাচ্ছে! তাদের হাস্যেজ্জ্বল চেহারা বিষয়টি আরো গাঢ় করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বলছেন, তারেক শরীফ আর সেলিম চৌধুরী মিলে গেলে কালারমারছড়া একেবারে শান্ত হয়ে যাবে। তবে অনেকে বিষয়টি নিছক ফটোসেশন বলে দাবি করছেন। আবার অনেকে আশবাদ প্রকাশ করছেন। তাদের চাওয়া দু’জনের ছবিটি যদি বাস্তব রূপ লাভ করুক। অশান্তির কালারমারছড়ায় ফিরে আসুক শান্তি বারতা!