নিজস্ব প্রতিবেদক:

মহেশখালী উপজেলার বড়মহেশখালী ইউনিয়নের আবদুল হাকিমের পুত্র মাহমুদুল করিম। তিনি কর্মজীবনের শুরু করেন চাষাবাদ দিয়ে। ধান, পানবরজ, তরিতরকারি, শাকসবজি, গরু, ছাগল, টার্কি, হাঁস-মুরগি চাষ এবং বাগান করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। জমি বর্গা নিয়ে সারা বছর তিনি চাষের কাজে জড়িত থাকেন। এতে তিনি এলাকায় একজন আদর্শ ও বড় চাষী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। একই সাথে দীর্ঘদিন স্যালোমেশিন দিয়ে পানি তুলে তা ধান ও পান বরজের বিক্রি করেন। এভাবে মাহমুদুল করিম এখন প্রতিষ্ঠিত চাষী। চাষাবাদ করে প্রতিবছরে ১০ লাখ টাকার বেশি আয় তার। তার এসব চাষাবাদে জড়িত রয়েছে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। শ্রমিকদের সঠিক মজুরি ও সময় শোধ করেন বলে শ্রমিকেরা তাকে খুব ভালোবাসেন। একই সাথে এলাকার অসহায় মানুষকে সাধ্যমতো সহযোগিতাও করেন। এতে তিনি এলাকার সর্বসাধারণের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি।

কিন্তু আরেকটি আলাদা গুণ রয়েছে। তা হলো প্রতিবাদী। চোখের সামনে অন্যায় দেখলে তা সহ্য করতে পারেন না। তাই বিভিন্ন সময় এলাকা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করে আসছেন তিনি। কোনো দিন কোনো রকমের অন্যায় ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড না করেও শুধু অন্যায় প্রতিবাদ করায় তিনি এখন বড় সন্ত্রাসী! চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আধিপত্য ঠেকিয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত চাষী মাহমুদুল করিম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় এখন একজন বড় সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ১৫টির বেশি মামলা। তবে সবকটিই মিথ্যা ও সাজানো বলে দাবি তার।

সরেজমিনের কথা হলে স্থানীয় লোকজন বলেছেন, কয়েক বছর আগে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দেবেঙ্গার পাড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্র তৈরির কারিগর দিদারের ও তার বাহিনীর লোকজনের হাতে এলাকার সাধারণ চরম নির্যাতনের শিকার হয়। দিদারের চাঁদাবাজি, লুটপাট, জবর-দখলসহ নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার ছিলো এলাকার প্রায় সব মানুষ। দিন-দুপুরে ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট করতো দিদার ও তার লোকজন। বিশেষ করে পাহাড়ে বেশি ছিলো তাদের অত্যাচার। পানবরজ, খামার, বাগান মালিকদের নিয়মিত মোটা অংকের চাঁদা দিতো হতো দিদার ও তার লোকজনকে। দীর্ঘদিন দিদারের এই নির্যাতনের কারণে এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে নিজের গোষ্ঠীর হলেও দিদারের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিলেন মাহমুদুল করিম ও তার ভাইয়েরা। এই নিয়ে হয়ে যায় প্রতিপক্ষ। এ কারণে বিভিন্ন সময় উভয় পক্ষের মধ্যে নানা সংঘর্ষ হতো। কিন্তু এলাকার মানুষ মাহমুদুল করিমদের সমর্থন করে আসছিলো। এক পর্যায়ে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় সন্ত্রাসী দিদার। দিদারের মৃত্যুতে র‌্যাবকে সহযোগিতার অভিযোগ তুলে মাহমুদুল করিম ও তার পরিবারের উপর প্রচন্ড ক্ষেপে যায় দিদারের পরিবার ও লোকজন। সেই থেকে প্রায় সময় মাহমুদুল করিম ও তার ভাইসহ পরিবারের লোককজনের প্রতিনিয়ত হামলা, লুটপাট ও মিথ্যা মামলা দিতে থাকে তাকে দিদারের বাবা মোঃ ফোরকান।

অভিযোগ মতে, দিদারের মৃত্যুর পর থেকে দিদারের পিতা মোঃ ফোরকান ও দিদারের লোকজন মাহমুদুল করিমদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন করে আসছে। মাহমুদুল করিমের ভাই নেচারকে হত্যা করেছে। আরেকভাই জয়নালের চোখ তুলে নিয়েছে। অন্যদের উপরও বিভিন্ন সময় নৃশংস হামলা করেছে। এক-দেড় মাস পর পর দলবল নিয়ে মাহমুদুল করিমের বাড়ি, খামার ও চাষাবাদে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও তান্ডব চালায়। কয়েকদিন আগেও নিহত দিদারের লোকজন গিয়ে মাহমুদুল করিমের বাড়ি, খামার ও চাষাবাদে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। হামলাকারীরা ঘরবাড়ি ভাংচুর, ধান, খামারের হাঁস-মুরগি গরু, ছাগল লুট নিয়ে গেছে। আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে খামার। মাহমুদুল করিমসহ তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দিয়েছে ১৫টি বেশি সাজানো ও মিথ্যা মামলা।

এই প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী মাহমুদুল করিম বলেন, ‘মূলত এলাকার মানুষের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গিয়েই আজ আমার ও পরিবারের এমন করুণ দশা হয়েছে। দিদারের মৃত্যুর সাথে আমাদের কোনো ধরণের সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও সেই থেকে দিদারের বাবা ফোরকান ও ভাইয়েরা এবং তাদের লোকজন মিলে আমাদের অত্যাচার চালাচ্ছে। ফোরকান আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় থানা ও বিভিন্ন দপ্তরে লবিং করে আমাদের নামে ১৫টি বেশি সাজানো মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়েছে। এমনকি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সংঘটিত বেশ কয়েকটি ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে আমাকে আসামী করে দিয়েছে। আমি অশিক্ষিত। আমাদের কোনো খুটি নেই। তার এসব মামলা কোনোভাবে মোকাবেলা করতে পারছি না। আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই বলে পুলিশ বা অন্যান্য আইনÑশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়েও আমাদের দুঃখ ও কষ্টের কথাগুলো বলতে পারছি না। প্রশাসনও আমাদের কথা শুনতে চায় না। তারা শুধু ফোরকানের পক্ষ নিয়ে আমাদের পাকড়াও করতে আছে। এমনকি মামলাগুলো জামিন নেয়ার মতোও অবস্থা আমাদের নেই। ফোরকান ও লোকজন সব সময় আমাদের ক্ষতি করার জন্য উৎপেতে থাকে।

তিনি বলেন, আল্লাহকে হাজির করে বলছি- আমি কোনোর ধরণের সন্ত্রাসী কাজের সাথে জড়িত নই। আমার অপরাধ শুধু সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনকে আমি সে কথাগুলো কোনোভাবেই বলতে পারছি না। মামলা ও হামলার ভয়ে আমি কোথাও বেরও হতে পারছি না। একইটাই আকুতি আমি সন্ত্রাসী হলে, এলাকার সাধারণ মানুষ যদি আমাকে সন্ত্রাসী বলে তাহলে আমাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলা হোক। এই জন্য প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে তদন্তের জোর অনুরোধ করছি। আমি সন্ত্রাসী বা অপরাধী না হই তাহলে দয়া করে স্বাভাবিক জীবনের ফিরতে দেয়া হোক।