শাহেদ মিজান, সিবিএন:
অজানা কারণে বন্ধুপ্রতীম ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশের মানুষ পেঁয়াজ নিয়ে বড়ই বেকায়দায় রয়েছে! এই নিয়ে মাস দেড়েক ধরে পুরো দেশে বেশ আলোচনায় রয়েছে। দাম কমানোর বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার, তুরস্ক থেকে আমদানি করা হয়েছে পেঁয়াজ। কথা ছিলো বিকল্প আমদানির কারণে স্বাভাবিক হয়ে যাবে পেঁয়াজের দাম। কিন্তু সংকট কাটলেও সেই আকাশচুম্বি দাম! এখনো ৭০ টাকার উপরে সর্বনিম্ন ৮০ টাকা থেকে ১০০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে আমদানিতে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েও কক্সবাজারের পুরো জেলাইতে এই দাম বিরাজ করছে। প্রথম প্রথম পেঁয়াজের এই আকাশচুম্বি দাম নিয়ে মানুষ হা-হুতাশ করলেও এখন সবাই চুপসে গেছে! বিষয়টিকে সবাই ‘গা সওয়া’ করে নিতে শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনের কঠোর হুঁশিয়ারি সত্তে¡ও কক্সবাজার শহরসহ প্রতিটি উপজেলা ও এলাকায় ৮০ টাকার উপরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১০০ টাকায় স্বাভাবিকভাবে বিক্রি হচ্ছে। আবার কোথাও ১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা প্রশাসনের বেঁধে দেয়ার দামের কথা বললেও তা আমলে নিচ্ছে বিক্রেতারা। উপরন্তু প্রশাসনের দাম বেঁধে দেয়াকে তিরস্কার করা হচ্ছে। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম দিয়ে মানুষের ক্ষোভ উর্ধ্বে হয়েছে। এই নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার লোকজন স্থানীয় দাম জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

তথ্য মতে, সব এলাকায় এখনো অস্বাভাবিক দামে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও প্রশাসনের অভিযান কোথাও নেই। লোকজন বিভিন্নভাবে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রশাসন তা নজরে নিচ্ছে না। প্রশাসনের এই নির্লিপ্ত ভূমিকার কারণে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছে মতো পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এ কারণে এক বাজারেই কয়েক দামে পেঁয়াজ বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে লোকজন এখন পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামকে বাধ্য হয়ে স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করেছে। অনেক প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেও সমাধান না পাওয়ায় তারা এখন চুপসে গেছেন প্রায়!

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে এবং প্রয়োজন মতো মজুদও রয়েছে। মিয়ানমার, তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমদানিও অব্যাহত রয়েছে। তাতে পেঁয়াজ সংকট থাকার কথা না। আমদানি এসব পেঁয়াজের দামও সহনশীল মাত্রার। তবুও অতিরিক্ত দাম কেন- এই প্রশ্ন সর্বত্র।

শুরুর দিকে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম সম্পর্কে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিলো, মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানী হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। এতদিন মিয়ানমারের পেঁয়াজগুলো সরাসরি টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ করায় দাম অনেক ছাড়ে বিক্রি করতে পারবে ব্যবসায়ীরা। টেকনাফ থেকে সংগ্রহ করা পেঁয়াজ কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা কিনতে পারবে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪২ টাকা। সে হিসেবে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের আমদানীকৃত পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারবে। তাই কক্সবাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি করতে নির্দেশ দিয়েছিলো কক্সবাজারের প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। কিন্তু নির্দেশ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা উল্টো ৭০ টাকা ছাড়িয়ে এখনো ১১০ টাকা পর্যন্ত পেঁয়াজ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজের সংকট কাটিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের পেঁয়াজ আসায় কক্সবাজারে সংকট নেই। এই পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের বাড়তি থাকার কথা না। এটা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কারসাজি হতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রশাসনিক নজর অব্যাহত রয়েছে।’