তানভিরুল মিরাজ রিপন

রামু ট্রাজেডির প্রথম ভিডিয়ো নিউজ করে ‘আল-জাজিরা’ তখন থেকে ‘আল-জাজিরা’ আমাদের মানুষের কাছে খুবই গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।

২০১২ সালে রামু বৌদ্ধ মন্দিরের নানা কাহিনী ও অভিযোগের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ হল, ‘ বুদ্ধের অনেকগুলো পুরা জিনিস পত্র গায়েব’ ।

বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ সেটি বুঝতে কখনো পারতাম না, যদি তার পরের বছর ইত্তেফাক’এ পেলাম রামু থেকে গায়েব হওয়া একটি ঐতিহাসিক জাহাজ প্রদর্শন করা হচ্ছে য়ুরোপের কোন এক জাদুঘরে।

প্রশ্ন জেগেছে নিশ্চয়, রামুর নৌকো য়ুরোপে গেলো কি করে? রাতারাতি তো যায়নি। একটি কারন তো আছে। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাকে গুনতে হয়েছে তিনটা বছর।

উত্তর জাহাজ পাওয়া নিয়ে নয়, উত্তর পেয়েছি জাহাজ গায়েব হওয়া নিয়ে। এরপর থেকে আমি ধারনা পেয়েছি যে সংঘর্ষ হলে কার কি লাভ হয়।

রামু একটি শুধু মাত্র স্থান নয়। ঐতিহাসিক এবং নৃতাত্ত্বিকদের মতে কক্সবাজারে প্রথম মানুষ বসবাস করেছিল রামতে। রামুতে স্বয়ং ‘ বুদ্ধ’ এক ‘বোধিবৃক্ষে’র নীচে ‘বক্ষস্থিতি’ করেছিলেন। অর্ধেক পৃথিবীর সম্রাট ‘সম্রাট অশোকে’র পায়ের ছাপ,ঘোড়ার বহরও রামুতে এসেছিল। গুহা, আর সেসকল পুরাকীর্তি নিয়ে ‘রাংকুট বৌদ্ধ বিহার’এ একটি ‘জাদুঘর’ আছে। প্রধান ভান্তের একটি ‘ধ্যানগুহা’ যেখানে প্রবেশ করবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। রাংকুট বৌদ্ধবিহারের বয়স গুনতে হলে আপনাকে যেতে হবে ৬ষ্ঠ শতক থেকে গুনতে হবে।

ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিকভাবে রামু সবসময় প্রানকেন্দ্র ছিল।

রাম সীতারও একটি বনবাস কেন্দ্রীক ঘটনা নিয়েও তৈরী হয়েছে একটি মন্দির । রামু নামটি রাংকুট বনাশ্রমের ভান্তেরা দাবি করেন এখান থেকে নেওয়া, আর সনাতন ধর্মালম্বীরা দাবি করেন সীতার বনবাস থেকে নেওয়া, মতদ্বৈধতাকে ঘিরে রামুর নামটি রামুই আছে।

শুধু সীতা নয়, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এসেছিলেন এ রামুর সৌন্দর্য দেখতে। সৌন্দর্য দেখে তিনি তাঁর ‘রাজর্ষি ‘ উপন্যাসে রামুর বিষয়াদিকে প্লটও করেছিলেন।

সে রামুর পুরাকীর্তির দিকে বৈশ্বিক জাদুঘর ব্যবসায়ীদের নজর সবসময়ই থাকবেই। আমার সন্দেহ ‘ রামু ট্রাজেডি ঘটনাকে ঘিরে যারা লাভবান হয়েছে বিশ্ব জাদুঘর ব্যবসায়ীরা এবং আল-জাজিরা।ধারনা পোষন করছি যে,আগামী এক প্রজন্মপর বা দু প্রজন্ম পর রামু থেকে চুরি হয়ে যাওয়া সকল পুরাকীর্তি বিশ্বের কোনো না কোনো এক জাদুঘরে প্রদর্শিত হবে’৷

ঘটনা সত্য। নকশাল আন্দোলন নিয়ে ‘মিঠুন চক্রবর্তী’র ‘নকশাল’ সিনেমা। ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। সে সিনেমার মূল বার্তা যদিও নকশাল বিপ্লব নিয়ে, কিন্তু মিডিয়া নিয়ে একটি সত্য পর্যবেক্ষণ তুলে আনে ‘অনির্বাণ’ চরিত্রের মাধ্যমে ‘মিঠুন ‘৷

সাংবাদিকতা পড়ি সুবাধে মিডিয়ার অনেকগুলো সত্য আমরা জানবার চেষ্টা করি। আমাদের ‘প্ল্যানিং থিওরী’ বলে একটি থিওরী আছে, সেখানে অনেকগুলো বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে মিডিয়া অডিয়েন্স তৈরী করে। এমন একটি নিয়মও আছে ‘ যেনো দর্শক আপনার চ্যানেল দেখবার জন্যই রিমোর্ট ঘুরিয়ে দেখতে চাওয়াটাই নিয়ন্ত্রন করবে মিডিয়া ‘। মিঠুন চক্রবর্তীর সিনেমাটিতে বুঝানো হয় যে ‘ টিআরপির পাওয়া জন্য ঘটনা আমরা তৈরী করবো’।তারই প্রেক্ষিতে ‘আত্মহত্যার ঘোষনাকে পুজী করে একটি মিডিয়া চ্যানেল রাতারাতি ব্যবসায়িক জায়গা দখল করে ফেলেছে’। অনির্বাণের শেষ কথাগুলো চ্যানেল মালিক শঙ্করের উদ্দেশ্যে, “বেচতে বেচতে ত কিছুই বাকি রাখিস নি। এই যে লোক গুলো এখানে এসেছে, তারা একটা মৃত্যু দেখতে চায়। ভিডিও করবে, ছবি তুলে বন্ধুদের পাঠাবে, বলবে, লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। তারা খুশি হবে। এরা ভাবছে এটাই জীবন। কিন্তু এই জীবন আমরা চাই নি। এই স্বার্থপর সোসাইটি আমরা চাই নি।”

চ্যানেল মালিক সাবেক বিপ্লবী সিদ্ধার্থ বলে, “সব কিছুই পণ্য, সব কিছু আমি বিক্রি করবো।”একজন প্রকৃত বিপ্লবীর বিপ্লবের রোমান্টিসিজম ও বাস্তবতার টানাপোড়েনে আদর্শ থেকে সাময়িক সরে যাওয়া কিংবা বিশ্বাস ঘাতক সঙ্গীকে খুঁজে বের করে সাজা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টার গল্প “নকশাল”।

তাঁরই প্রেক্ষিতে ‘আল-জাজিরা’ আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে ব্যবসা করেন।

বিদেশি জায়ান্ট মিডিয়াগুলোর গ্রহন যোগ্যতা আছে আমাদের দেশে। আমরা অতি গরীব, আর্তনাদ করে হ্যাশট্যাগ করে জায়ান্ট মিডিয়াগুলোর নজর কাড়তে চায়। এতে করে তাঁরা পালস বোঝে ছড়ায় কিছু ডাহা মিথ্যা। বিবিসির ভুল ব্যাখ্যা অনেকাংশেই দ্বায়ী আবরারের মৃত্যুর জন্য, তবে ছাত্রলীগ যে খুনী নয় সেটিও বলছি না।

এদেশে যুগে যুগে ধর্ম সত্য। সুতরাং ধর্মের অনুভূতি অবশ্যই শ্রদ্ধা সাথে সম্বোধন করতে হবে। কারন অনুভূতি ও বিশ্বাস খুব হালকা কাঁচ। তবে সত্য, চির সত্য হল ধর্ম ।

দেশের নানা প্রান্তে প্রতিনিয়ত দেখছি মানুষ খুন হচ্ছে। জঘন্যরকম ভাবে বাড়ছে খুন ও খুনী হওয়ার প্রবনতা। কেনো বাড়ছে তা স্পষ্টত মানসিক গবেষণার বিষয় হলেও, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়ন পুরোটা দায়ী। মানুষ আস্থা হারিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নেই। একপেশে দল কেন্দ্রীক হয়ে দাড়িয়েছে সব কিছু তারই কারনে দুষ্কৃতি কারীরা সুযোগ নিচ্ছে। উস্কে দিচ্ছে সাধাারন জনগনকে। ধর্মের অনুভূতিকে ঘিরে লুটপাট করছে সব সম্প্রীতি।

তবে আমাদের ভাবতে হবে, আপনার ধর্মের অনুভূতিকে রাজনীতি স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না। বাবরী মসজিদের বিষয়ে দ্বন্দগত বিষয়টির ফায়সালা করেছে ভারতীয় হাইকোর্ট, তারই প্রেক্ষিত ধরে প্রতিবেশী দেশের উগ্র রাজনীতিপন্থীরা সংঘর্ষ বাধাতে মরিয়া। সুতরাং সাবধান হউন। আপনার বিশ্বাসের সম্পূর্ণ মর্যাদ লাভের জন্য আপনি প্রতিবাদ করুন। একজন হিন্দুও করুক সে প্রতিবাদ,একজন খ্রিস্টানও করুক সে প্রতিবাদ। আমরা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে, কাউকে কাফের,কাউকে নাসেরা,কাউকে বিজাতি বলা থেকে দূরে থাকি। আমাদের এ দেশের সম্প্রীতিকে ফিরিয়ে আনতে পারবে একমাত্র ধর্মীয় বক্তারা।