প্রেস রিলিজ :
নবাব স্যার সলিমুল্লাহর কারণেই ঢাকা রাজধানী হতে পেরেছে। তিনি না হলে ঢাকা নগরী কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যেতো বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ভিসি, প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন। উল্লেখ্য, ঢাকা নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৬ অক্টোবর, সকাল ১০টায় সেমিনারটি আয়োজন করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সুলতানা শফি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রদূত জনাব মমতাজ হোসেন এবং আবেদ হোল্ডিংস লি:-এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, জনাব এ কে এম বরকত উল্লাহ।
‘১৯০৫ সালের বঙ্গ বিভাগ ও নবাব স্যার সলিমুল্লাহ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট গবেষক প্রফেসর ড. মো. আলমগীর এবং ঢাকা নওয়াব পরিবারের জনাব আরমান হাসান। আলোচক ছিলেন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এস. এম. মোস্তাফিজুর রহমান। ড. আলমগীর তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ১৯০৫ সালে নওয়াব সলিমুল্লাহ বৃটিশদের সহায়তা নিয়ে বঙ্গবিভাগ করেন।“পূর্ব বঙ্গ ও আসাম” নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করেন। তখন নতুন ঐ প্রদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গিয়েছিলো। এখনকার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ভবন, পুরানো হাইকোট ভবন, কার্জন হল, বাংলা একাডেমি ভবন, বুয়েটের আব্দুর রশিদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাস ভবন, চামেরী হাউজ ও মিন্টোরোডের আলীশান বাংলো গুলো ঐ সময় তৈরি হয়। কংগ্রেস পন্থী হিন্দুদের তীব্র আন্দোলনের কারণে বৃটিশ শাসক ১৯১১ সালে বঙ্গবিভাগ বাতিল করে না দিলে ঢাকা আরো সম্দ্ধৃ হতো। বঙ্গবিভাগ রদের পর নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ দাবীর প্রেক্ষিতে বৃটিশ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করে। প্রধান অতিথির ভাষণে প্রফেসর সুলতানা শফি নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর বিভিন্ন অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ সৃষ্ট অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ আর বর্তমান কালের মুসলিম লীগ এক নয়। সেই সময়ে মুসলিম লীগ বাংলার সবাই করতেন। বঙ্গবন্ধুও মুসলিম লীগ করতেন। পরবর্তীতে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকের বিরুদ্ধেই মুসলীম লীগ ভেঙ্গে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করা হয়। নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ অবদানকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বৃত্তি ব্যবস্থা চালু, তার জীবন ও কর্ম পাঠ্য বইতে বিশেষ করে ইতিহাসের বইতে অবশ্যই থাকা দরকার।
সভাপতি তাঁর ভাষণে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় নওয়াব সলিমুল্লাহর অবদানের কোন তুলনাই হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিন্তু বিরোধিতা কম হয়নি। যারা বিরোধীতা করেছিলেন তাদের নাম শুনলে আপনারা অবাক হবেন। কিন্তু খাজা সলিমুল্লহ ও সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর জোর প্রচেষ্টায় ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবরূপ পায়। নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকীতে আমরা সবাই তার কথা অবশ্যই স্মরণ করবো। তার অবদানকে মূল্যায়ন করবো। তার জীবন দর্শন নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করে প্রতিটা স্কুল কলেজে প্রদর্শন করা দরকার। তাহলে নতুন প্রজন্ম তার অবদান সর্ম্পকে জানতে পারবে। নওয়াব স্যাল সলিমুল্লাহ যে অসম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন সেটা তার অর্থ দানের তালিকা দেখেই বুঝা যায় তিনি জাতি-ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে দান কাজ করতেন। পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবিভাগ করেছিলেন। নিজের টাকায় পিতার নামে আহসানুল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা এখন বুয়েট হয়েছে।
উল্লেখ্য, নওয়াব সলিমুল্লহ স্মরণে গঠিত এই অরাজনৈতিক সমাজ সেবি প্রতিষ্ঠানটি নওয়াব সলিমুল্লাহর মূল্যায়নে যে সব দাবি দাওয়া উপস্থাপন করেছেন সেটার সাথে সেমিনারের সভাপতি ও প্রধান অতিথি একত্বা প্রকাশ করেন। বেলা ১:৩০ মিনিটে সেমিনার শেষে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।