মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

এক ঘরে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই সচিব। স্ত্রী কামরুন নাহার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে, স্বামী খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ২২ তম সচিব হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন গত রোববার ১৩ অক্টোবর। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমানে সিনিয়র সচিব হিসেবে সেতুবিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক আদেশে বিগত সালের ২২ জানুয়ারি কামরুন নাহার ( বিসিএস, তথ্য-সাধারণ) কে রাষ্ট্রপতি কোটায় প্রেষণে সচিব পদায়ন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের ১৯৮৪-ব্যাচের কর্মকর্তা কামরুন নাহার এর আগে তথ্য অধিদফতরের প্রধান ছাড়াও গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরিবোর্ডের সদস্য সহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে যুক্তরাজ্য, সৌদিআরব, জার্মানী, স্পেন সফর করেন।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর কামরুন নাহারের পিআরএলে যাওয়ার কথা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার মোল্লা পাড়ায় ১৯৬১ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন কামরুন নাহার। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ ইউনুস, মাতার নাম-মোছাম্মৎ জামিলা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করা ছাড়াও তিনি সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন। ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি কামরুন নাহার বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারের সদস্য হিসাবে সরকারি চাকুরীতে যোগ দেন।

অপরদিকে, খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা দিয়ে সেতুবিভাগের সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ দেয়। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে সিনিয়র সচিবের পদটি সৃষ্টি করা হয়।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ১৩ নভেম্বর ২০১১ তারিখে সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ৩১ জানুয়ারী ২০১৩ তারিখে সচিব পদে ও ১৩ জুলাই ২০১৭ তারিখে সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি পদাধিকার বলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক। এই পদে যোগদানের পূর্বে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মাঠ প্রশাসনে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এবং উপসচিব, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের পরিচালক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বব্যাংক, ইউএনএফপিএ, এডিবি, সিআইডিএ, ডিজিআইএস, ইউএনডিপি এর অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে উপপরিচালক, উপ-প্রকল্প পরিচালক, প্রকল্প পরিচালক এবং জাতীয় প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তাঁর রয়েছে। তিনি দাপ্তরিক প্রয়োজনে ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, স্পেন, মরোক্কো মিশর, তুরস্ক, সৌদি আরব, চীন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী এবং কেনিয়া সফর করেছেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগ হতে বিএসএস (অনার্স) এবং এমএসএস ডিগ্রী অর্জন করেন। ডেভলপমেন্ট প্ল্যানিং এর উপরে তাঁর একটি পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমাও রয়েছে। তিনি Project Management, HRD Skills for Functional Managers, Private Sector Seed Management ইত্যাদি বৈদেশিক প্রশিক্ষণ কোর্সে সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।
২২ তম কেবিনেট সচিব হিসাবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া বর্তমানে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম টাঙ্গাইলে জম্মগ্রহন করেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকার নাসিমান-৬, ১ ইস্কাটন গার্ডেন, অফিসার্স কোয়ার্টারে বসবাসরত। সচিব কামরুন নাহার ও সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম দম্পত্তি খন্দকার আসিফ ওমর ও খন্দকার মুহতাসিম ওমর নামক ২ পুত্র সন্তানের গর্বিত জনক ও জননী।

মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ২২ তম সচিব হিসাবে গত ১৩ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে নিয়োগ পাওয়া খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমান মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর অপরাহ্নে মন্ত্রীপরিষদ সচিবের দায়িত্ব গ্রহন করবেন বলে বিশ্বস্থ সুত্র সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন।