বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর অভিযান জোরদার রেখেছে পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শঙ্খলাবাহিনী। এই অভিযানের কাছে পুরো শহরের অপরাধীরা কোনোঠাসা হয়ে রয়েছে। তবে এখনো বেপরোয়াভাবে বীরদর্পে অপরাধ সংঘটিত করে যাচ্ছে বিজিবি ক্যাম্প এলাকার আলোচিত জমজ ভাই ‘হাসান-হোসেন’র অপরাধী চক্র। ওই এলাকার মৃত আবুল কালামের পুত্র এই হাসান ও হোসেনের নেতৃত্বে বিশাল একটি চক্র প্রধান সড়কে যাত্রীদের ছিনতাই, মোটরসাইকেল চুরি, জমি দখল, চাঁজাবাজি, কিশোল গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এই অপরাধ চক্রের কাছে পুরো বৃহত্তর বিজিবি ক্যাম্প এলাকাসহ আশেপাশের লোকজন জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের হুমকিতে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পুরো বিজিবি এলাকায় নানা অপরাধ সংঘটিত করেছিলো সিকদার পাড়া এলাকার মৃত আবুল কালামের পুত্র সোলায়মান সিকদার। তার নেতৃত্বে একটি বিশাল অপরাধী চক্র গড়ে উঠে ওই এলাকায়। ওই চক্রটি জমি দখল, ইয়াবা ব্যবসা, চাঁদবাজি, মোটরসাইকেল চুরি, প্রধান সড়কে যাত্রীদের ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে বেড়াতো। এসব ঘটনায় চক্রের মুলহোতা সন্ত্রাসী সোলায়মানের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় তাকে মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় সে। এতে ক্রসফায়ারের ভয়ে সম্প্রতি বিদেশ পালিয়ে গেছে সন্ত্রাসী সোলায়মান। সে পালিয়ে গেলে তার অপরাধী চক্রের হাল ধরে তার জমজ ছোট ভাই হাসান সিকদার ও হোসেন সিকদার। সোলায়াম সিকদার পালিয়ে যাওয়া পরও সমানতালে অপরাধ সংঘটিত করতে থাকে ওই চক্রটি। এতে বর্তমানে চক্রটি ‘হাসান-হোসেন’ চক্র নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এই চক্রটিই এখন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন পুরো এলাকাটিকে অপরাধ আর আতঙ্কে ভরে রেখেছিলো সন্ত্রাসী সোলায়মান সিকদার। সে বিদেশ চলে যাওয়ায় এলাকার মানুষ স্বস্তি পেয়েছিলো। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তার জমজ দুই ভাই হাসান ও হোসেন হয়ে উঠেছে তার চেয়ে বেশি আতঙ্ক। সোলায়ামানের মতো হাসান ও হোসেনও বড় অপরাধী হয়ে উঠেছে। তারা স্বল্প সময়ের মধ্যেই নানা অপরাধ সংঘটিত করে পুরো এলাকাকে আবারো আতঙ্কিত করে তুলেছে। হাসান ও হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিশাল অপরাধী চক্রটি প্রতিদিন- প্রতিক্ষণ নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। তারা ইয়াবা বাণিজ্য, ওই চক্রটি জমি দখল, ইয়াবা ব্যবসা, চাঁদবাজি, মোটরসাইকেল চুরি, প্রধান সড়কে যাত্রীদের ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। তাদের উৎপাতে এলাকার মানুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে উঠেছে। রাত ১০টার আগেই লোকজনকে বাসায় ঢুকে যেতে হচ্ছে। প্রতিদিন রাত করে বাসায় ফেরা লোকজন এই চক্রের হাতে ছিনতাই ও মারধরের শিকার হচ্ছে। এমনকি দিনের বেলায় বাইরের কেউ গেলে তার সর্বস্ব ছিনিয়ে হয়। এই প্রায় সময় প্রধান সড়কে গাড়ি আটকিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব ছিনতাই করে নিচ্ছে। অন্যদিকে এলাকায় কেউ জমি কিনলে, বাড়ি তৈরি করলে এই চক্রকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। করছে জমি জবর দখল। শুধু তাই নয়; পুরো এলাকাকে ইয়াবায় সয়লাব করে করে ফেলেছে এই অপরাধ চক্র। তবে আরো ভয়ংকর হচ্ছে- হাসান-হোসেন নিয়ন্ত্রণ করছে কিশোর গ্যাং। এলাকা উঠতি তরুণদের ফুঁসলিয়ে গঠন করেছে কয়েকটি কিশোর গ্যাং। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরারও সব অপরাধে সাথে জড়িয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে কয়েকজন স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এই চক্রের হোতা হাসান ও হোসেনসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীদের কাছে বন্দুকসহ নানা ভয়ংকর অস্ত্র। এসব অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব ধরণের অপরাধ করে যাচ্ছে তারা। কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে তাদেরকে দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। এরই মধ্যে অনেক মানুষকে মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন করেছে হাসান-হোসেনসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা। এই নিয়ে থানায় অনেক অভিযোগও পড়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই ভয়ে আর কেউ মুখ খোলে না। এতে দিন দিন আরো বেপরোয় হয়ে উঠেছে এই অপরাধী চক্র। এই অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি এলাকাবাসীর।
এ ব্যাপারে জানতেই কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) মোঃ ইয়াছিন বলেন, ‘বিজিবি ক্যাম্প এলাকাও ওই অপরাধী চক্র সম্পর্কে পুলিশ অবগত রয়েছে। বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়েছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে এলাকাবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।