মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম (পরচিতি নম্বর : ১২২৯)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উর্ধবতন নিয়োগ-১ অধিশাখার ৬১৯ নম্বর স্মারকমূলে রোববার ১৩ অক্টোবর উপ সচিব তমিজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগ প্রদান করা হয়।
অপরদিকে কক্সবাজারের কৃতিসন্তান মোহাম্মদ শফিউল আলমের (পরিচিতি নম্বর : ১০৯৮) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে বাতিল করে তাঁকে মন্ত্রীপরিষদ সচিবের পদমর্যাদা ও সে অনুযায়ী অন্যান্য সকল সরকারি সুবিধাদি দিয়ে আগামী ১ নভেম্বর থেকে পরবর্তী ৩ বছরের জন্য ওয়াশিংটনস্থ বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরে বিকল্প নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ অধিশাখার ৪৫৬ নম্বর স্মারকমূলে রোববার ১৩ অক্টোবর উপসচিব মোঃ অলিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগ প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ কর্মকর্তার পদ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আগামী ২৮ অক্টোবর সোমবার তাঁর শেষ কর্মদিবসে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব হিসাবে মোহাম্মদ শফিউল আলমের ৪ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে।
নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব (কেবিনেট সেক্রেটারি) খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগ হতে বিএসএস (অনার্স) ও এমএসএস ডিগ্রী অর্জন করেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ১৩ নভেম্বর ২০১১ তারিখে সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। তিনি ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে সচিব পদে ও ১৩ জুলাই ২০১৭ তারিখে সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি পান। তিনি পদাধিকার বলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক। এই পদে যোগ দেওয়ার আগে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মাঠ প্রশাসনে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এবং উপ-সচিব, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের পরিচালক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বব্যাংক, ইউএনএফপিএ, এডিবি, সিআইডিএ, ডিজিআইএস, ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে উপ-পরিচালক, উপ-প্রকল্প পরিচালক, প্রকল্প পরিচালক ও জাতীয় প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তাঁর রয়েছে। তিনি দাপ্তরিক প্রয়োজনে ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, স্পেন, মরোক্কো, মিশর, তুরস্ক, সৌদি আরব, চীন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও কেনিয়া সফর করেছেন। ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং বিষয়ে তার একটি পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমাও রয়েছে। তার স্ত্রী মিস কামরুন নাহার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন। পারিবারিক জীবনে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম-কামরুন নাহার দম্পতি দুই পুত্র সন্তানের গর্বিত জনক ও জননী।
অন্যদিকে, কক্সবাজারের কৃতি সন্তান মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলমের চাকুরীর নিয়মিত মেয়াদ শেষে বিগত ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য বিগত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ১৩ অক্টোবর রোববার চুক্তির আরো দেড় মাস বাকী থাকতেই আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে তাঁর চুক্তি বাতিল করে আগামী ১ নভেম্বর হতে পরবর্তী ৩ বছরের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পেলেন। বিশ্বস্ত সুত্র সিবিএন-কে জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবর অপরাহ্নে মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রীপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। নতুন নিয়োগ পাওয়া খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখা পালং গ্রামের বাসিন্দা মোহম্মদ শফিউল আলম প্রশাসনে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছৈয়দ হোসাইন ও মাতার নাম আলমাস খাতুন। তিনি ১৯৫৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। শফিউল আলম ১৯৭৫ সালে পালং মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৭৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৭৯ সালে ওমরগনি এমইএস কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএ ও ১৯৮০ সালে বঙ্গবন্ধু ল’ টেম্পল থেকে এলএলবি পাশ করেন। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (প্রশাসন) উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৩ সালের ২৭ অক্টোবর বান্দারবনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে শফিউল আলম যুক্তরাজ্যে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভেলপমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশনের উপর এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভূমি মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব, রাষ্ট্রপতির সচিব, ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এমডিএস, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, ময়মনসিংহ ও মাগুরার জেলা প্রশাসক, ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার ইউএনও সহ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলাদেশ সরকারের ২১তম মন্ত্রীপরিষদ সচিব। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, পাকিস্তান, নেপাল, কানাডা, জার্মানি, চীন, হংকং, কেনিয়া, গায়ানা, পানামা, তুরস্ক, কাতার, হাইতি ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
তিনি একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন জনকল্যাণমুখী সরকারি কর্মকর্তা। সেবাপ্রার্থীদের সার্বিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে এদেশের গরিব, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিলো তার কর্মজীবনের ব্রত।
মোহাম্মদ শফিউল আলম শহীদ পরিবারের সন্তান। ১৯৪৭ সালের ৫ মে জম্ম নেয়া তাঁর বড় ভাই এটিএম জাফর আলম মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শাহাদত বরণ করেন। শহীদ হওয়ার আগে এটিএম জাফর আলম সিএসপি (প্রশাসন) এ উত্তীর্ণ একজন কর্মকর্তা ছিলেন। চলতি বছর এটিএম জাফর আলম সিএসপিকে সরকার মরণোত্তর দেশের সবচেয়ে পর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন।