মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়াপাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সংগঠিত হওয়া চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার হত্যাকান্ডের মামলা আরো নিবিড়ভাবে তদন্তের জন্য পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) কে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মামলাটি অফিসিয়ালি ফাইলপত্র, সকল ডকুমেন্টস পিবিআই-কে হস্তান্তর করা হয়। রোববার ১৩ অক্টোবর সকালে কক্সবাজার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এ তথ্য প্রকাশ করেন।

সভায় জানানো হয়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ড ঘটার ৩ দিন পরই মূলতঃ মামলাটি পিবিআই-কে হস্তান্তর করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কক্সবাজার জেলা পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে মামলাটির একটা পর্যায়ে পৌঁছায় মামলাটি আরো অধিকতর তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা পুলিশ সময় নিয়েছিলো। এ মামলাটি পিবিআই এর মাধ্যমে আরো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত খুনীদের সনাক্ত করে তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন বলে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম।

এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম বলেন-যে দু’জনকে গত বুধবার ৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা ঘটনার সাথে জড়িত বলে, তাদের কথায় সন্দেহ করা হচ্ছে। এ পৈশাচিক হত্যাকান্ডটি পেশাদার খুনীদের দ্বারা ঘটানো হয়েছে বলে আমরা অনুমান করছি। এ হত্যাকান্ডে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদ্বয় ছাড়াও আরো অপরাধী জড়িত থাকতে পারে বলে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম ধারণা পোষন করেছেন। পিআইবি’র নিবিড় তদন্তে তা বের হয়ে আসতে পারে। এ মামলায় অযথা কাউকে হয়রানি করা হবেনা। রক্তের চাপ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সুরতহাল রিপোর্ট, ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) হতে ফরেনসিক প্রসেস ও ডিএনএ প্রোফাইলিং রিপোর্ট আসলে মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা আরো বেশী সহজ হবে বলে জানান তিনি। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এ বিষয়ে সকলকে একটু ধৈর্য ধরার জন্য অনুরোধ করেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃংখলা কমিটির উক্ত সভায় কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান এডিএম মোহাঃ শাজাহান আলি, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আ.জ.ম মঈন উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবদুল মতিন, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসংগত, উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ৪ জনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী রিপু বড়ুয়া (২৮) ও অপরজন হলো রোমেল বড়ুয়ার পুত্র উজ্জ্বল বড়ুয়া (২৪)।
গ্রেপ্তারকৃত ২ জনই রোকেন বড়ুয়ার নিকটাত্মীয়। তারমধ্যে, রিপু বড়ুয়া হচ্ছে-প্রবাসী স্বজনহারা রোকেন বড়ুয়ার সেজ ভাই শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী এবং ফোর মার্ডারে নিহত সনী বড়ুয়ার (৬) মা। অপর আসামি হলো রোকেন বড়ুয়ার ভাগ্নি জামাই উজ্জ্বল বড়ুয়া। উজ্জ্বল বড়ুয়ার বাড়ি রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের রামকোট এলাকায় অবস্থিত। উজ্জ্বল বড়ুয়াকে গত মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তার শ্বশুরবাড়ি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে রিপু বড়ুয়াকে তার স্বামীর বাড়ি পূর্ব রত্নাপালং এর বড়ুয়া পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়ীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাত্রে রোকন বড়ুয়ার মা সুখী বালা বড়ুয়া (৬৫), সহধর্মিণী মিলা বড়ুয়া (২৫), একমাত্র পুত্র রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬)কে কে বা কারা জবাই করে হত্যা করে। এরমধ্যে, নিহত রবিন বড়ুয়া রুমখা সয়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্র এবং সনি বড়ুয়া একই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো।

এবিষয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৪৭/২০১৯, যার জিআর মামলা নম্বর : ৪৭৮/২০১৯ (উখিয়া) ধারা : ফৌজদারি দন্ড বিধি : ৩০২ ও ৩৪। মামলায় নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা ও রোকেন বড়ুয়ার শ্বশুর শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়েছেন। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামী করা হয়নি, আসামী অজ্ঞাত হিসাবে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।