প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পতি ভারত সফরে বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। বহুল আলোচিত এ সফর শেষে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমেও বিতর্কিত ‘এনআরসি’ বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর প্রশ্নে ভারতকে আরও স্বচ্ছতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
এনআরসি নিয়ে ভারত একদিকে সরকার যদি দুই রকম কথা বলে এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় -বিষয় দুটো একসঙ্গে সম্ভব নয় বলেও একাধিক সম্পাদকীয়তে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ভারত সফরকে সার্বিকভাবে দেশটির মিডিয়া কীভাবে বিশ্লেষণ করছে, বিসিবি বাংলা এক প্রতিবেদনে তারই অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
দ্য হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সম্পাদকীয়
বস্তুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে বিদায় নেয়ার পর প্রায় তিনদিন কেটে গেছে, কিন্তু ভারতের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সেই সফরের কাটাছেঁড়া ও ময়নাতদন্ত এখনও অব্যাহত।
চারদিনের সফরে শেখ হাসিনা ভারতের প্রায় সব জাতীয় সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ঠাঁই পেয়েছেন, আর সফর শেষে বিভিন্ন সম্পাদকীয় বা মন্তব্য প্রতিবেদনে এখনও চলছে। তবে সফরের সময় স্বাক্ষরিত বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক বা চুক্তির চেয়ে ভারতীয় মিডিয়াতে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ‘এনআরসি’, যে প্রসঙ্গ দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখও করা হয়নি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার সম্পাদকীয়
‘দ্য হিন্দুস্থান টাইমস’ও প্রায় একই সুরে বলছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সেরা বন্ধু’ যদি এনআরসি প্রশ্নে উদ্বিগ্ন বোধ করে তাহলে দিল্লির উচিত হবে অঙ্কুরেই সেটা বিনাশ করা। এ পত্রিকাটি অবশ্য একই সঙ্গে তিস্তা চুক্তির প্রশ্নেও ভারতকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
দিল্লিতে বাংলাদেশ গবেষক শ্রীরাধা দত্ত বলছিলেন, ভারতীয় মিডিয়াতে এ ধরনের পর্যবেক্ষণ বেশ ইতিবাচক একটা পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। তার কথায়, ‘এবার দেখে ভালো লাগছে যে, অনেক বেশি খোলা মন নিয়ে ও একটা ন্যায্যতার দৃষ্টিতে ভারতীয় মিডিয়া দু’দেশের সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করছে।’
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, এনআরসি ইস্যু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি স্ট্রেইন বা উত্তেজনার কারণ -এ অভিযান বন্ধ করে ভারতের উচিত হবে দক্ষিণ এশিয়ার ‘গ্রোথ ইঞ্জিন’ বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতির পাঠ নেয়া।
আবার এনআরসি-কে যেভাবে সরকার একদিকে অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে বর্ণনা করছে, অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবৈধ বিদেশিদের বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার হুমকি দিচ্ছেন -এ দ্বিচারিতার কড়া সমালোচনা করেছে ‘স্ক্রল’ পোর্টাল।
বাংলাদেশ উপকূলে ভারতের রেডার সিস্টেম বসানোর পটভূমিতে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কমোডোর উদয় ভাস্কর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাতে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধটির শিরোনাম হলো- ‘ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে দিল্লিকে এটা মেনে নিতে হবে যে, বাংলাদেশে চীনেরও একটা উপস্থিতি আছে।’
ভারতীয় নৌসেনার সাবেক কর্মকর্তা ভাস্কর বলেছেন, ‘চীন থেকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সরঞ্জাম পেয়ে থাকে যেসব দেশ, সেই তালিকার ওপর দিকেই আছে বাংলাদেশ। সেখানে আরও আছে পাকিস্তান বা মিয়ানমারও। এখন আমি যেটা বলতে চেয়েছি, চীন থেকে সাবমেরিন পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সামর্থ্য নিঃসন্দেহে অনেক বেড়েছে, আর সেটা ভারতকেও নিশ্চয় উদ্বিগ্ন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে চীনের এ উপস্থিতি একটা বাস্তবতা, এটাতে বিরক্ত বোধ না করেই ভারতকে তা ডিল করার উপায় খুঁজতে হবে। হয় আমরা, নয়তো চীনের মধ্যে থেকে বেছে নাও, বাংলাদেশকে সেদিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না।’
ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জিও ওই পত্রিকাতেই তার মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় রাখতে চাইলে দিল্লিকে যে ‘আরও অনেক বেশি কিছু করতে হবে’, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
শেখ হাসিনার সফরের পর মেইনস্ট্রিম ভারতীয় মিডিয়ার মূল বক্তব্যও একই রকম- ‘এবার কিন্তু ভারতের করে দেখানোর পালা।’