বর্তমানে আমদের দেশে প্রাইমারী মাধ্যম ব্যতীত প্রত্যেকটি ধাপেই ছাত্র রাজনীতির প্রচলন রয়েছে। কোন উদ্যোগের উদ্দেশ্যের সাথে যদি ফলাফলের মিল না থাকে তাহলে সেই উদ্যোগ যত তাড়াতাড়ি সংশোধন বা বাদ দেওয়া যায় ততই মঙ্গল।
সাধারণত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররা সরকারী দল,আধা সরকারী দল,বেসরকারি দল মানে বিরোধী দল,ডান দল,বাম দলসহ ডজন খানেক দলে বিভক্ত থাকে।
ছাত্রদের মধ্যে বন্ধুত্ব হবে কি করে যেখানে তারা নিজেরাই ডজন খানেক দলের কয়েক ডজন পোস্টের জন্য লড়াই করে যাওয়া কয়েক’শ প্রার্থীর সমর্থনে বিভক্ত হয়ে পড়ে!
দেশের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ গবেষণা ও আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিং এ অনেক পিছিয়ে, কিন্তু কেন?
কয়েকশ জন করে পরীক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে যেসব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাঞ্চ পায় তাদের নিয়ে জনগণের অনেক স্বপ্ন থাকে,কিন্তু জনগণের টাকায় গড়ে উঠা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা না করে খুন,মাদকসেবন,টেন্ডারবাজী বা পোস্ট/পদবীর জন্য ৪ বছরের স্নাতক ৬/৭ বছরে শেষ করে তখন তাদের দিকে জনগণের আঙুল তুলাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই তাপস কিংবা দিয়াজ অথবা বুয়েটের আবরার হত্যাকান্ডের সাথে ছাত্ররাজনীতির যে সম্পৃক্ততা নেই সে কথা কেউ বলতে পারবেনা,শিক্ষাঙ্গনে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য একজন সহপাঠী তার অন্য সহপাঠীকে মেরে ফেলতেও একটু কুণ্ঠাবোধ করে না,যার জন্য দায়ী আমাদের তথাকথিত নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম “ছাত্র রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলভিত্তিক ছাত্র সংগঠন ” এর অপব্যবহার।
ছাত্ররা পড়াশোনা করুক,নতুন নতুন বিষয়ের উদ্ভাবন করুক, পৃথীবিকে আরো গতিশীল করুক এমনই তো হওয়ার কথা,
রাজনীতি করার জন্য যেখানে আমাদের মুরব্বীরা রয়েছেন,সেখানে ছোটদের সম্পৃক্ত করতে হবে কেন?
পোস্ট-পদবী বা অন্য কিছুর লোভ দেখিয়ে যারা ছাত্রদের অমানুষিক কর্মকান্ডে লেলিয়ে দিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে নেয় বাংলার বুকে তাদের বিচার হবে কিনা জানিনা,তবে ছাত্রদের নেতৃত্ব বিকাশের প্ল্যাটফর্ম ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক হলেই মনে হয় সবচেয়ে সুন্দর হয় যার ফলে অন্তত কোন শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের দিকে তেড়ে যেতে পারবেনা।
যদি রাজনৈতিক দলভিত্তিক ছাত্র সংগঠন বা ছাত্র রাজনীতির প্রথা কোন সংগঠন প্রয়োজন মনে করে,তবে তাদের নিশ্চিত করতে হবে পরবর্তীতে তাদের সংগঠনের দায়িত্বশীল কোন শিক্ষার্থী দ্বারা অন্যকেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায়ভার সেই সংগঠন নিবে এবং এই প্ল্যাটফর্ম কোন অছাত্র/কুছাত্র কিংবা সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর অজুহাত হবে না।
অপরদিকে রাষ্ট্র যদি চায় রাজনৈতিক দলভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির প্রথা নিষিদ্ধ করবে,তাহলে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে ডিপার্টমেন্টাল ক্লাবগুলোর পাশাপাশি অরাজনৈতিক বিভিন্ন ক্লাব গঠন করা যেতে পারে,যার কর্ণধারগণ সরাসরি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় বা সুবিধা-অসুবিধার জন্য সেশনজট বা ক্যাম্পাস অবরোধ না করে শিক্ষকদের সাথে সভা করে সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করবে,পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার জন্য শিক্ষার্থীদের দ্রুত প্রশাসনের সহায়তা পাওয়ারও ব্যবস্থা থাকতে হবে।
যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। উন্নত জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে “শিক্ষা” নামক মেরুদণ্ডটিতে যেন কেউ আঘত করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শিক্ষাবান্ধব করে গড়ে তুলার দায়িত্ব আমার,আপনার,সকলেরই।

মিছবাহ মাহমুদ মিশকাত
এল এল বি (অনার্স), এল এল এম
শিক্ষানবিশ আইনজীবি
জজ কোর্ট,চট্টগ্রাম।
Email-Misbamahmud@gmail.com