এ কে এম ইকবাল ফারুক ,চকরিয়া:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত শনিবার (৫ অক্টোবর) জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে একদল দূর্বৃত্ত কর্তৃক দিনদুপুরে হাফেজ রুহুল আমিন (৫৭) নামে এক শিক্ষককে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সাতজনকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ছেলে মো. এমদাদ উল্লাহ বাদী হয়ে ঘটনারদিন রাতে চকরিয়া থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে।

এদিকে এ মামলা দায়েরর চারদিন অতিবাহিত হতে চললেও এখনো অধরা রয়েছেন কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া এজাহার নামীয় ছয় আসামী। ফলে এসব খুনীদের ভয়ে আতংঙ্কে দিন কাটছেন নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের পরিবার। তবে পুলিশের দাবী, আলোচিত এ শিক্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত মামলার প্রধান আসামী বেলাল উদ্দিনকে ঘটনার পর পরই পুলিশ স্থাণীয় জনতার সহায়তায় গ্রেপ্তার করে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম সার্বক্ষনিক মাঠে কাজ করছে।

জানা যায়, জমির বিরোধকে কেন্দ্র গত শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কৈয়ারবিল নয়াপাড়া গ্রামের মৃত মৌলানা আমিন উল্লাহ’র ছেলে ও স্থাণীয় কৈয়ারবিল মখজনুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ রুহুল আমিনকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা। এসময় নিহতের বড়ভাই মৌলানা আমিনুর রশিদকেও দূর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রকাশ্যে দিনদুপুরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনার পরপরই স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ হত্যাকান্ডের মূল কিলার মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত বেলাল উদ্দিন একই এলাকার মৃত মো.শফির ছেলে। আলোচিত এ শিক্ষক হত্যাকান্ডের দিন রাতেই নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের ছেলে মো. এমদাদ উল্লাহ বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত বেলাল উদ্দিনসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বেলাল উদ্দিন ছাড়াও তার তিন ছেলের পাশাপাশি নিহতের বড়ভাই মাষ্টার মামুনুর রশীদ ও তার দুই ছেলেকে আসামী করা হয়েছে। আলোচিত এ শিক্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনার ৪দিন অতিবাহিত হতে চললেও এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া অন্য ছয়জন আসামী। ফলে এসব খুনীদের ভয়ে আতংঙ্কে দিন কাটছে নিহতের পরিবার ও তাদের স্বজনরা।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে এলাকায় ঘুরে স্থাণীয় এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দূর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের বড়ভাই মৌলানা আমিনুর রশিদের ভোগ দখলীয় জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল একই এলাকার মৃত মো.শফির ছেলে বেলাল উদ্দিন গংয়ের। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে মৌলানা আমিনুর রশিদ প্রতিপক্ষ বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থাণীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও চকরিয়া থানায় পৃথক দৃ’টি অভিযোগও দায়ের করেন। থানা ও ইউনিয়ন পরিষদে বিচারাধীন মামলার নিস্পত্তি না হওয়ার আগেই গত শনিবার সকালে বেলাল উদ্দিন দলবল নিয়ে সশ¯্র অবস্থায় মৌলানা আমিনুর রশিদের ভোগ দখলীয় জমির আধাপাঁকা ধান কেটে নিলে মৌলানা আমিনুর রশিদ তার ছোটভাই হাফেজ রুহুল আমিনকে সাথে নিয়ে তাদের ধান কাটতে বারণ করেন। এসময় দূর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করলে ঘটনাস্থলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে মারা যায় হাফেজ রুহুল আমিন। ঘটনার পরপরই এলাকার লোকজন মৌলানা আমিনুর রশিদকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের পুত্র ও মামলার বাদী মো. এমদাদ উল্লাহ বলেন, গত ২০ বছর পূর্বে স্থানীয় আবুল কালাম মেম্বারের কাছ থেকে ২০ শতক (৬০ কড়া) জমি ক্রয় করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছিলেন আমার পিতা হাফেজ রুহুল আমিন ও জেঠা (আব্বার বড় ভাই) মৗলানা আমিনুর রশিদ। গত কিছুদিন পূর্বে আমাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী মৃত মো.শফির ছেলে বেলাল উদ্দিন ওই জমি তার দাবী করে জোর পূর্বক জবর দখলে নিতে চাইলে আমার জেঠা (আব্বার বড় ভাই) মৗলানা আমিনুর রশিদ বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থাণীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও চকরিয়া থানায় পৃথক দৃ’টি অভিযোগ দায়ের করেন। থানা ও ইউনিয়ন পরিষদে বিচারাধীন মামলার নিস্পত্তি না হওয়ার পূর্বেই গত শনিবার সকালে বেলাল উদ্দিন দলবল নিয়ে সশ¯্র অবস্থায় আমার জেঠা মৌলানা আমিনুর রশিদের ভোগ দখলীয় জমির আধাপাঁকা ধান কেটে নিলে তিনি আমার আব্বা হাফেজ রুহুল আমিনকে সাথে নিয়ে তাদের ধান কাটতে বারণ করেন। এসময় দূর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করলে ঘটনাস্থলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে মারা যায় আমার আব্বা হাফেজ রুহুল আমিন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত মৌলানা আমিনুর রশিদকে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিহত হাফেজ রুহুল আমিনের স্ত্রী কামরুন্নাহার বলেন, জায়গা জমি নিয়ে আমার অপর ভাসুর মাষ্টার মামুনুর রশিদের সাথে আমাদের বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের সূত্র ধরে ইতিপূর্বে মামুন মাষ্টার তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে আমার এক ছেলেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। বিষয়টি নিয়ে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। পারিবারিক এ বিরোধকে কেন্দ্র করে মামুন মাষ্টার প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে নিজে ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে এ ঘটনা ঘটায় বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী হত্যাকান্ডের চারদিন অতিবাহিত হতে চললেও এখনো পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন মামলার এজহার নামীয় ছয় কিলার। ফলে এসব খুনীদের ভয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আতংঙ্কে দিন কাটছেন তারা। অবিলম্বে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত খনীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তিরও দাবী জানান তিনি।

হাফেজ রুহুল আমিন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামী বেলাল উদ্দিন হাফেজ রুহুল আমিন হত্যাকান্ডের সাথে তার জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত বয়েছে বলেও জানান তিনি।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত শনিবার হাফেজ রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই সাত জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্তের জন্য থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওসি আর বলেন, হাফেজ রুহুল আমিন হত্যা মামলার প্রধান আসামী বেলাল উদ্দিনকে ঘটনার পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। শীঘ্রই এসব আসামীরা ধরা পড়বেন বলেও জানান তিনি।