মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের শূন্য আসনে ভোট গ্রহন ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের একজন দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা সিবিএন-কে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সুত্রমতে, এখন যেসব উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে, তার সবক’টিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের শূন্য আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন করা হবে। এটা একটা কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত। কখন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের উক্ত কর্মকর্তা সিবিএন-কে জানান, চলতি মাসের শেষ দিকে কমিশনের মিটিং রয়েছে, সে মিটিং থেকেই কক্সবাজার জেলার পেকুয়া সহ আরো কয়েকটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তপশীল একত্রে ঘোষনা করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
সুত্র মতে, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সচিবালয় পেকুয়া উপজেলায় ভোট গ্রহনের তপশীল ঘোষনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উক্ত কর্মকর্তার মতে, আইনগত কোন বাঁধা না থাকলে চলতি মাসের শেষ দিকে সিডিউল ঘোষনা করে আগামী নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উপ নির্বাচনের ভোট গ্রহন করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে স্থানীয় সরকার বিভাগের লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে-গত ৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের ০৫৩.২০১৫.৬১২ নম্বর স্মারকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ শূণ্য ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী উক্ত আদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে, তাই উপজেলা পরিষদ আইন ২০১১ এর ১৬ ধারা অনুসারে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠির অনুলিপি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পেকুয়ার ইউএনও সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রদান করা হয়েছে।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার এস.এম শাহাদাত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সিবিএন-কে জানান, সম্প্রতি যে সব জায়গায় নির্বাচন হচ্ছে, সব জায়গাতেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে আগামী ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন করা হবে। জেলা নির্বাচন অফিসার এস.এম শাহাদাত হোসেন আরো জানান, বিগত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তথ্য মতে, পেকুয়া উপজেলায় মোট ৭ টি ইউনিয়ন হলো-পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, রাজাখালী, টৈটং, বারবাকিয়া, শীলখালী, উজানটিয়া ও মগনামা। এখানে মোট ৪০ টি ভোট কেন্দ্রে ৮৫ টি ভোট কক্ষ রয়েছে। উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১০৬২৮৯ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৫৫৬২৬ জন এবং মহিলা ভোটার ৫০৬৫৩ জন। বর্তমানে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মিনু দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বীয় পদ থেকে অপসারণ করা হয়। একই সাথে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম কর্তৃক ০৫৩.২০১৫.৬১২ নম্বর স্মারকে স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেয়া হয়েছিলো। আদেশে বলা হয়, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ এবং ১ নম্বর স্পেশাল জজ ট্রাইব্যুনালের বিচারক খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজ চলতি বছরের ৯ এপ্রিল ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(এ) ও ১৯ (এফ) ধারায় আসামী ও পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। যার এসটি মামলা নম্বর-১৫৮/২০১৭ ইংরেজী, জিআর মামলা নম্বর ১২৩/২০১৭ ইংরেজী এবং ২০১৭ সালের ১৩ আগষ্টের পেকুয়া থানার মামলা নম্বর ০৪। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজারের স্পেশাল জজ ট্রাব্যুনালের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করলে হাইকোর্ট তাঁর সাজার আদেশ স্থগিত না করে জাহাঙ্গীর আলমের ৬ মাস জামিন মন্ঞ্জুর করেন। যার ফৌজদারী আপীল নম্বর ৫৪৪৬/২০১৯ ইংরেজী। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে হাইকোর্টের প্রদত্ত ৬ মাসের জামিন বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষ গত ২৩ মে ৬৩৪/২০১৯ নম্বর সিএমপি মামলা দায়ের করলে উচ্চ আদালত মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিন আদেশ স্থগিত করেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের স্থানীয় সরকার আইনের ৮ (২) (ঘ) এর বিধান মতে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং একই আইনের ১১(১) (খ) ধারা মতে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ হতে অপসারণযোগ্য। তাই উক্ত আদেশে ২০১১ সালের স্থানীয় সরকার আইন ৮ (২) (ঘ) এবং ১৩ (১) (খ) ধারা মতে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ হতে অপসারণ করা হয় এবং পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। উপজেলা পরিষদের আইন মতে, পদ শূণ্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের পর থেকে পরবর্তী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের শূন্য পদে উপ নির্বাচন করবেন। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৭ আগস্টের আদেশ মূলে প্রকাশিত গেজেটের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম যদি উচ্চ আদালতে আপীল করেন, তাহলে সেটা আপীল আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে, কখন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের শূন্য পদে উপ নির্বাচন হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।