হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর 
১৯৮৯ সালের কথা। বয়স তখনো সবেমাত্র পাঁচ বছর। সেই বয়সেই মা-বাবার সদিচ্ছায় গৃহশিক্ষকের নিকট আমার লেখা-পড়ার হাতে কড়ি। “মুসলিম বাঙ্গালা শিক্ষা” ছিলো সাধারণ শিক্ষাধারায় আমার প্রথম পাঠ্য বই। আর একমাত্র বড়বোন ছিলেন  প্রথম সহপাঠী। “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি।” এটি আমার মুখস্থ করা প্রথম কবিতা। ভাই-বোন দু’জন মিলে কবিতাটি আবৃত্তির সেই সুর-ছন্দ এখনো আমার কানে ভেসে আসে।
যখন বর্ণমালার পরিচিতি লাভ করে একটু একটু রিডিং পড়তে শিখছি তখন বাবা ভর্তি করিয়ে দেন, আমাদের  গ্রাম  লম্বরীপাড়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুরু হলো বিদ্যালয় জীবনের যাত্রা। বাঁকখালী নদীর তীরে প্রকৃতির ছায়াঘেরা
সবুজ পল্লীতে আমাদের বিদ্যালয়ের পরিবেশ ছিল সত্যিই অনন্য। শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক মণ্ডলীও ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ ও আদর্শবান। খুবই আদর-যত্নের সাথে পড়াতেন আমাদের প্রিয় শিক্ষকেরা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের  “ভোর হলো”,  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ” আমাদের ছোট নদী”,  পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের “আসমানী” ” মামার বাড়ি” ইত্যাদি কবিতা সহপাঠীদের একসাথে আবৃত্তি করাতেন সম্মানিত শিক্ষক মণ্ডলী। আর এক সাথে এসেম্বলিতে অংশ নেয়ার আনন্দ তো আলাদা ছিলোই। দুপুরে টিফিন ছুটিতে দৌড়াদৌড়ি, কানামাছি, হা-ডু-ডু ইত্যাদি খেলা আনন্দে ভিন্ন মাত্রা এনে দিতো।
শৈশবের পাঠশালার  সেই স্মৃতি সত্যিই মধুর। এখনো মন চায় মধুময় শৈশবে ফিরে যেতে। মন চায় বিদ্যালয়ের সবুজ আঙ্গিনায় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে প্রিয় শিক্ষক ও সহপাঠীদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে  কবিতা আবৃত্তি করতে। কিন্তু সে সময় যে আর ফিরে আসার নয়; কালের স্রোতে সেসব কিছু এখন স্মৃতির ফ্রেমে বন্দী। শৈশবের অসংখ্য স্মৃতির সাক্ষী বিদ্যালয়ের  সেই পুরনো টিন শেড ঘরটিও এখন আর নেই। যাঁদের পদাচণায় আলোকিত হতো বিদ্যালয় ক্যাম্পাস, যাঁদের স্নেহের পরশে আমাদের বড়ে উঠা সেই প্রিয় শিক্ষক আনোয়ার স্যার, জাকের স্যারসহ একে একে সকলেই অবসরে চলে গেছেন। মালতী শীল যাঁকে আমরা আপা স্যার বলে ডাকতাম তিনিও হয়ত অবসরে চলে গেছেন। এরই মধ্যে আমাদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন শ্রদ্ধাস্পদ শিক্ষক মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ ( নতুন মৌলভী স্যার), মাওলানা মালেকুজজামান ( পুরাতন মৌলভী স্যার ) ও নুর আহমদ স্যার।
জীবনের সূচনালগ্নে যাদের স্নেহসিক্ত পরশে ধন্য হয়েছি। যাঁদের শিক্ষা সুন্দর পথযাত্রায় এখনো আমাকে অনুপ্রাণিত করে এমন বেশ ক’জন  শিক্ষক মণ্ডলীকে চিরদিনের জন্য  হারিয়ে  আমার স্মৃতির ক্যানভাস জুড়ে  এখন বিরাজ করছো শোকের আবহ।  আমি সেই অমর  শিক্ষকদের রুহের  মাগফিরাত এবং জীবিত শিক্ষকদের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।  আমিন।
লেখক- সভাপতি, রামু লেখক ফোরাম।