মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কুু, নাইক্ষ্যংছড়ি:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এবারের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি- জমায়াত অংশগ্রহণ না করায় নৌকা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী ও সমর্থকরা।

এদিকে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ হওয়ায় দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও নিজ দলের বিদ্রোহী নেতা কর্মীদের মাঝে বাড়ছে কোন্দল। অপর দিকে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামীলীগের একটি অংশ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিজ দলের নেতাকর্মীদের। এ জন্য নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে নাইক্ষ্যংছড়ি আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্ত  হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ ২টি ইউনিয়নে বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় নৌকা ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে জামায়ত-বিএনপি ও আওয়ামীলীগের একটা অংশ । এ জন্য উপজেলা সদর,ঘুমধুম ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের অাশংকা করছেন আওয়ামীলীগের অনেক নেতা।

তবে স্থানীয় ভোটার সাহাজান ও কালু জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী একজন পরিক্ষিত নেতা তার জনপ্রিয়তা ও কৌশলের কছে হেরে যাবে নবাগত প্রার্থী নুরুল আবছার। বিছামারা এলাকার মনজুর এ প্রতিবেদককে বলেন সদর ইউনিয়নের দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডা হাড্ডি। তবে তার জরিপমতে নুরুল আবছার এগিয়ে। তসলিম দলীয় প্রতিকে নির্বাচন করলেও আবছারও আওয়ামী যুবলীগ নেতা তাই দুইজন একই দলের হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচরনায় যাচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী ও প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আবছার ইমন আনারস প্রতীক নিয়ে মাঠে অবিরাম প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যুবলীগ নেতা নুরুল আবছার ইমন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন তার প্রত্যাশা। তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, তিনি গত দুই বছর দায়িত্ব পালন কালে মানুষের সুখে দুঃখে পাশে ছিলেন। রাস্তাঘাটসহ এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ১৪ অক্টোবর ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

এদিকে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী এলাকায় কর্মী সমর্থকদের উৎসবমুখর পরিবেশে চালিয়ে যাচ্ছে প্রচার-প্রচারনা। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার আমেজ লক্ষ করা গেছে। ভোটের মাঠে ভোটারদের মন গলাতে প্রার্থীরা দিন রাত নির্ঘুম ভোট ভিক্ষা চেয়ে গ্রামে চষে বেড়াচ্ছে।

উপজেলা সদরসহ তিন ইউনিয়নের মানুষের মাঝে ভোটের হাওয়ায় সরগরম হয়ে দোকান,রাস্তাঘাট ও চায়ের টেবিলে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে পুরো দমে। বিছামারা ও আশারতলী এলাকার কয়েকজন ভোটার জানান, বিগত নির্বাচনের চেয়ে এবার ইউপি নির্বাচনে প্রচারণায় মরিয়া হয়ে উঠেছে দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় আওয়ামীলীগ প্রাথীর প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ। তাই স্থানীয় বিএনপি-জামায়ত কৌশলগত কারনে তারা মত প্রকাশ করতে চান না। তবে তারা চায় জাতীয় নির্বাচনের প্রতিশোধ হিসাবে যে কোন ভাবে নৌকার ভরাডুবি হওক এ নির্বাচনে।

এদিকে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যানিং মার্মা চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তার নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বাহান মার্মা।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়ছেন  সতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ। এ ইউনিয়নে তার  পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তিনি প্রবিণ ব্যক্তি ও সৎ হিসাবে তার পক্ষে দলমত নির্বিশেষ মাঠে নেমেছে এলাকার মানুষ তাকে বিজয়ী করতে। রশিদ আহাম্মদ সাংবাদিকদের জানান,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয় লাভ করবেন।

আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আজিজ জানান,অবশ্যই বিগত পাঁচ বছরে মানুষের সেবা ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করেছেন তিনি এ জন্য আবারো তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন এলাকার মানুষ এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

তবে নির্বাচনের বাকি আছে আরো ৬ দিন ঘুমধুম,নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নে নির্বাচনী পথ সভা সমাবেশ চোখে পড়ার মত। প্রার্থীদের পোষ্টার হাট বাজার ও নির্বাচনী মাঠে ছেয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার আবু জাফর মোঃ ছালেহ বলেন,  ভোটাররা যাতে প্রতিটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারেন সে জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত কোন প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।