মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন এক প্রত্যন্ত ইউনিয়নের নাম বমু বিলছড়ি। এ ইউনিয়নের চার পাশে মাতামুহুরী বেষ্ঠিত পার্বত্য লামা উপজেলা। এখানে মাধ্যমিক পর্যায়ের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ আব্দুল হামিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও মূলত ২০১৪ সাল থেকে ঈর্শনীয় অগ্রগতি ও শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এ জনপদে। ইতিমধ্যে শিক্ষা ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন সহ-পাঠক্রমিক ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে এ বিদ্যালয়। ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মতলবসহ এলাকার বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার দিক থেকে এটি একটি সক্রিয় বিদ্যালয় (এক্টিভ স্কুল) হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে বিদ্যালয়টিতে শ্রেণি কক্ষের সংকট প্রকট। নেই একাডেমিক ভবন। ফলে শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নির্মিত টিনশেড ঘরগুলো ইতিমধ্যে জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যেই চলছে পাঠদান। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত (চারতলা ফাউন্ডেশনের) একাডেমিক ভবনটির নিমার্ণ কার্যক্রম সম্পূর্ন হলে শিক্ষা বিস্তারে এলাকায় সম্পদে পরিণত হবে প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল মোস্তফা দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যালয়টির এ অগ্রযাত্রা হয় বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী।
সুত্রে জানা যায়, বমু বিলছড়ি ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার মানুষে বসবাস। ১৯৯৭ সালে এ ইউনিয়নের বুমরকুল এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ আবদুল হামিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বমুরকুলে শুরু হওয়ার পর নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ২০০৩সালে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সাল থেকে বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এলাকার চেয়ারম্যান আবদুল মতলবসহ কিছু শিক্ষানুরাগীর প্রচেষ্ঠায় পুনরায় চালু হয় বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম। এ বিদ্যালয়ের জন্য পানিস্যাবিল এলাকার মরহুম ছিদ্দিক আহমদ ও শহীদ আবদুল হামিদের ভাই এজাহার হোছাইন ১০০শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে বর্তমান প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফার প্রচেষ্ঠায় ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারী নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের পাঠদান কার্যক্রম অনুমোদন পায়। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী একাডেমিক স্বাীকৃতি লাভের পর ২০১৮ সালে মাধ্যমিকে উন্নতিকরণ হয় বিদ্যালয়টি। একই বছরে প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফার একান্ত প্রচেষ্ঠায় ২ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪তলা বিশিষ্ট ডিজিটাল বিদ্যালয় ভবন স্থাপনের অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৪০০জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। তম্মধ্যে ছাত্রী ১৭৫জন, ছাত্র ২২৫জন। এতে ৮ জন শিক্ষক, ১ জন অফিস সহকারি ও ১ জন দপ্তরী কর্মরত আছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়টির সেমিপাকা টিনসেট ভবনে রয়েছে ৭টি শ্রেণী কক্ষ। এতে কোন মতে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয় ভবনের সামনে রয়েছে সুবিশাল মাঠ। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতলব ও সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন সুষ্ঠুভাবে ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দৈনন্দিন রুটিন কাজ করার জন্য ৬ মাসের জন্য এ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। বিদ্যালয়টি জে.এস.সি ও এস.এস.সিতে প্রতি বছর সন্তোষজনক ফলাফলের পাশাপাশি গৌরব অর্জন করে চলেছে। অথচ নামমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে বিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে ইর্শান্বীত হয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তির তথ্য ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবী করছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসী। তারা বিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এলাকার প্রবীন মুরব্বী মো. আলী মেম্বার ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আজিজুর রহমান জানায়, ইউনিয়নটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় ছেলে মেয়েদেরকে অন্য কোথাও নিয়ে পড়ালেখা করানো সম্ভব হয়না। ইউনিয়নবাসীর একমাত্র ভরসা বিদ্যালয়টি। এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে অনেক ছাত্র রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে শিক্ষার আলোকিত মানুষে পরিণত করছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফা বলেন, ২০১৪ সালে দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিদ্যালয় অনুমোদনের কোন কার্যক্রম ছিলনা। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিম্ন মাধ্যমিক পাঠদান অনুমোতি কার্যক্রম শুরু করে ৭ মাসের মধ্যে শিক্ষা বোর্ড কর্তর্র্র্ৃক পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি লাভ করে। একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হলে ২০১৭ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি, ২০১৮ সালে মাধ্যমিক স্তর পাঠদান অনুমতি লাভ ও একই বছর চার তলা বিশিষ্ট ডিজিটাল ভবন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রতন বিশ্বাস বলেন, এ রকম একটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে ভবন পাওয়া বিশাল ব্যাপার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফার প্রচেষ্টাই এনে দিয়েছে এ সাফল্য। এক্ষেত্রে আমরা আশা করছি অত্র অঞ্চলে বিদ্যালয়টি শিক্ষা বিস্তাারে ব্যাপক অবদান রাখবে।
বিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতলব জানান, ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও এলাকার শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে বিদ্যালয়টি ইউনিয়নে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাই বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণের জন্য শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।