ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
রোহিঙ্গাদের অনুকূলে বাংলাদেশী জন্ম নিবন্ধন সনদ বা নাগরিকত্ব সনদ প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনার, ইউপি চেয়ারম্যান বা সচিবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা।
সেইসাথে এসব ডকুমেন্টস পেতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
শিমুল শর্মা জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশিরা বিভিন্নভাবে চাপে রয়েছে। ভোটার হালনাগাদ করতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে। ইতিমধ্যে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর এলাকার পাঁচজন রোহিঙ্গা শনাক্ত হয়েছে, যারা নানা ছলচাতুরি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। ওই ৫ রোহিঙ্গা কিভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত হলো তার তদন্ত চলছে। নেপথ্যে কারা জড়িত রয়েছে তাদের অনুসন্ধান চলছে।
তিনি জানান, অনেক জনপ্রতিনিধি অফিসিয়াল স্মারক নং, তারিখ ইত্যাদি ছাড়াই প্রত্যয়ন পত্র ইস্যু করে থাকেন। যে কারণে জালিয়াতচক্র সুযোগ পেয়ে থাকে। বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরো সতর্ক থাকতে হবে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) নিজ অফিসে কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)কে দেয়া সাক্ষাতকারে নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর এসংক্রান্ত নতুন আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
উপসচিব মোঃ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সনদ প্রদান না করার বিষয়ে মনিটরিং জোরদারকরণ এবং চেয়ারম্যান ভুঁয়া নাগরিকত্ব সনদ এবং জন্ম সনদ প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। এতদ্বসত্ত্বেও কোন কোন চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত না হয়ে জন্ম সনদ এবং নাগরিকত্ব সনদ প্রদান করেছেন, যা সরকারি আদেশ অমান্য করার শামিল এবং গুরুতর অপরাধ।
ইতোমধ্যে এই বিষয়ে তিনজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুইজন সচিবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদেরকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে জারিকৃত ওই আদেশে আরো বলা হয়েছে, কোন চেয়ারম্যান অথবা সচিব রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সনদ বা জন্ম সনদ প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ফৌজদারি আইনে মামলা দায়েরের পাশাপাশি যিনি রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ অথবা নাগরিকত্ব সনদ প্রাপ্তিতে সহায়তা করবেন, তার বিরুদ্ধেও ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।
সদর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, তথ্য গোপন করে বাংলাদেশের ভোটার হয়েছে এমন পাঁচ রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছে কক্সবাজার নির্বাচন অফিস।
তারা হলো- কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাহাড়তলীর বাসিন্দা মৃত লাল মিয়ার ছেলে ফয়াজ উল্লাহ (৩৯), ফয়েজ উল্লাহর স্ত্রী মাহমুদা খাতুন (৩৭), ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়ার (নাজিরারটেক) বাসিন্দা মোঃ আইয়ুবের স্ত্রী নুরতাজ (৪১), সদরের পিএমখালী ৪ নং ওয়ার্ডের জুমছড়ির বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মোহাম্মদ নোমান (৪১), সদরের ঝিলংজা ৪ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কোনারপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে এহসান উল্লাহ (১৯)।
৮ সেপ্টেম্বর তাদের মধ্য থেকে ফয়াজ উল্লাহকে আটক করে পুলিশ।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্দেশনার আলোকে রোহিঙ্গা নাগরিক ভোটার হওয়ার বিষয়ে সরেজমিন তদন্তকালে ৫ জন রোহিঙ্গার বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। যার নম্বর যথাক্রমে -১৯৮০২২২২৪০৭০০০০২২, ১৯৯৮২২২২৪০৭০০০০২৩, ২০০১২২১২৪৪৭০০০০০১, ১৯৭৮২২২২৪০১০০০০১০, ১৯৭৮২২১২৪৭১০০০০২৩ অনলাইনে যাচাই করে দেখা যায় তারা ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তালিকাভুক্ত হন।
রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ল্যাপটপ আইডি নং যথাক্রমে -০৩৫১-০০০০ এবং ৯৩১৮-০০০০, যা সদর উপজেলার ল্যাপটপ আইডির সাথে মিল নেই। তাছাড়া তাদের ভোটার আবেদন ফরমের সাথে উপজেলা থেকে সরবরাহকৃত ফরমের অমিল।
এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ৫ জন রোহিঙ্গার মধ্য থেকে ফয়াজ উল্লাহ নামের ১ জনকে আটক করা হয়।
রোহিঙ্গা ফয়াজ উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য ছবি তোলেন বলে স্বীকার করেছেন।