কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (সিবিআইইউ) রাহিমা আক্তার ওরফে রাহি খুশি নামে এক রোহিঙ্গা তরুণীর পড়াশোনার খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হলেও ওই তরুণী নিজের চেষ্টায় স্কুল ও কলেজের পড়াশোনা শেষ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।
কিন্তু এ সময় তিনি নিজের রোহিঙ্গা পরিচয় লুকিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বলে বলছেন স্থানীরা। পরিচয় লুকিয়ে ভর্তির ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শেষে যারা উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী, সেই রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীদের কতটা সুযোগ আছে বাংলাদেশে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অন্তত বারোটি স্কুল ও মাদরাসা রয়েছে, যেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া যায়। জাতিসংঘ ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে।
এ ছাড়া কুতুপালং ক্যাম্প ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে দুইটি সরকারি স্কুল রয়েছে, যেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ আছে।
সেভ দি চিলড্রেনের শিক্ষা খাতের কর্মকর্তা মোর্তুজা আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য শিক্ষার লেভেল ১ ও ২ এর অনুমোদন দিয়েছে সরকার, অর্থাৎ রোহিঙ্গারা এখন প্রাইমারি পর্যায় পর্যন্ত পড়তে পারে।’
পরবর্তী আরও তিনটি লেভেল যার মধ্যে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার সুযোগ রয়েছে, সেগুলো চালুর ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান।
অর্থাৎ, এখন পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণির বাইরে রোহিঙ্গা শিশু কিশোরদের পড়াশোনার আনুষ্ঠানিক কোনো সুযোগ নেই।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে কোনো স্কুল-কলেজে পড়তে পারেন না। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের ভর্তির অনুমতি নেই।
যদিও ২০১৬ সালের আগে এ ব্যাপারটি খুব কড়াকড়িভাবে দেখা হতো না। ফলে তখন অনেকে রোহিঙ্গা পরিচয়ে স্কুল কলেজে পড়াশোনাও করেন।
কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সংবাদদাতারা বলছেন, কোনো শিক্ষার্থীর রোহিঙ্গা পরিচয় জানলে ক্যাম্পের বাইরের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাকে ভর্তি করা হয় না।
ক্যাম্পে কী বাংলাদেশের শিক্ষা অনুযায়ী পড়ানো হয়?
ক্যাম্পের ভেতরে যে স্কুলগুলো রয়েছে, সেগুলোয় রোহিঙ্গাদের ভাষা এবং ইংরেজিতে পড়াশোনা করানো হয়, কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা অনুযায়ী পড়াশোনা করানো নিষেধ বলে জানিয়েছেন সেভ দি চিলড্রেনের শিক্ষা খাতের কর্মকর্তা মোর্তুজা আহমেদ।
তিনি বলেছেন,‘বাংলাদেশের কারিকুলামে এসব বিদ্যালয় পরিচালিত হয় না। এখানে বাংলা ভাষাতেও পড়াশোনা করানো হয় না। ফলে এই স্কুলের পড়াশোনা শেষে সে এখানকার একটি সার্টিফিকেট পেলেও, ক্যাম্পের বাইরে সেটার কোনো মূল্য নেই।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর বেশ কয়েকটি মাদরাসা রয়েছে, সেগুলোয় আরবি ভাষা ও ইসলামি শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে পড়াশোনা করানো হয়।
কতটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের?
এ বছর ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণ হন রোহিঙ্গা তরুণ মোহাম্মদ ইউনুছ (ছদ্মনাম)। কিন্তু কয়েকদিন আগেও যখন স্কুলে পড়তেন, তখন তাকে নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। তিনি বলছেন, ক্যাম্পের স্কুলে পড়াশোনা করে খুব বেশিদূর শিক্ষা অর্জনের সুযোগ নেই।
তবে তিনি উখিয়ার স্থানীয় একটি স্কুলে পড়েছিলেন। আরও প্রায় ১০ বছর আগে রোহিঙ্গা পরিচয় জানা সত্ত্বেও তার ভর্তি হতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি নানা সমস্যায় পড়েন।
ইউনুছ বলেন, ‘একবার স্কুলের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আমাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন প্রধান শিক্ষক আমাদের ডেকে কয়েকদিন স্কুলে না আসার জন্য বলেন। আমরা চার পাঁচজন শিক্ষার্থী কয়েকদিন আর স্কুলে যাইনি। পরে স্যাররা আমাদের আবার ডেকে স্কুলে ক্লাস করতে বলেন।’
ইউনুছ যখন স্কুলে পড়েছিলেন, তখন তাকে রোহিঙ্গা পরিচয়টি গোপন করতে হয়নি। কারণ, সে সময় রোহিঙ্গাদের স্কুলে ভর্তি করতে না দেয়ার সিদ্ধান্তের এতো কড়াকড়ি ছিল না। কিন্তু এখন কারও রোহিঙ্গা পরিচয় জানলে তাকে আর কক্সবাজারের কোনো স্কুল-কলেজে ভর্তি করা হয় না।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।
