এম.আর. মাহামুদ, চকরিয়াঃ

মাথায় কত প্রশ্ন জাগে, দিচ্ছেনা কেউ জবাব তার, সবাই বলে মিথ্যা, বাজে, বকিসনা আর খবরদার! – কোন ক্লাসে কবিতাটি পড়েছি মনে নেই। তবে কবি নিশ্চয়ই মনের দুঃখে কবিতাটি লিখেছিলেন। আব্বা মারা গেছেন ৫ বছর আগে। ৫টা বছর পিতাবিহীন ঈদ পালন করে আসছি। বাবা থাকতে কোরবানির ঈদের জন্য নিজের পছন্দমত গরু ক্রয় করতেন। এখন নিজের কাধে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় বাবার মৃত্যুর পরও প্রতি বছর মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সাধ্যমত কোরবানি দিয়ে আসছি। শরিয়ত মোতাবেক কোরবানের ৩ ভাগের একটি অংশ হত দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করি। এছাড়া অপর অংশ আত্মীয় স্বজনের মাঝে বিলি-বন্টন করে অবশিষ্ট যা থাকে তা পরিবার পরিজন নিয়ে ভোজন করি। তবে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সম্পূর্ণ টাকা পাড়ার হতদরিদ্র, শিক্ষার্থী ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করে থাকি। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদে চামড়ার দর পতনের কারণে যথাযথ মূল্য না পেয়ে অধিকাংশ দরিদ্র লোকজনের মাঝে টাকাটা বিতরণ করতে পারিনি। এতে অধিকাংশ দরিদ্র লোকজন চরম ভাবে হতাশ হয়েছে। হঠাৎ করে এভাবে চামড়ার দর পতন নিয়ে সারাদেশে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অধিকাংশ মানুষ কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে খালে-বিলে, রাস্তা-ঘাটে ফেলে দিয়েছে। কেউ কেউ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার ভয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। এদেশের ঐতিহ্য সোনালী আঁশ হিসেবে খ্যাত পাট শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে চামড়া শিল্পও ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আল্লাহ না করুক পোশাক শিল্প ধ্বংস হলে তখন রাষ্ট্রের কর্ণধারদের ললিপপ চুষা ছাড়া কিছ্ইু করার থাকবে না। চামড়ার দর পতনে কারা লাভবান হবে আমরা জানিনা। তবে দেশ বৈদেশিক মুদ্রার আয় থেকে চরম ভাবে বঞ্চিত হয়েছে। প্রতি বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গরু-ছাগল-মহিষের চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। সে মোতাবেক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ও টেনারী মালিকেরা চামড়া ক্রয় করে। কিন্তু চলতি বছর তার চামড়ার দর পতনের হোতারা এখনও অধরা। তবে চামড়ার দর পতনের সিন্ডিকেটটি এখনও চিহ্নিত হয়নি। ইতিমধ্যে চামড়ার দর পতনের মূল হোতাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি করার কথা সরকার ভাবছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পর রিপোর্ট পেশ করতে করতে হয়তো আগামী কোরবানির ঈদ চলে আসবে। এতে জাতি কতটুকু লাভবান হয় আমরা জানিনা। সরকার প্রতি বছর ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের সময় হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ভিজিএফ, ভিজিডি ও জিআর এর চাল বিতরণ করে। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে থাকে ৪/৫ দিন। কোরবানির ঈদের সময় যারা কোরবান করে তারা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে মাংস বিতরণ করে। মাংস গুলো রান্না-বান্নার জন্য কিছু রন্ধন সামগ্রীর প্রয়োজন হয় যা সরকার কোন সময় দেয়নি। দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোরবানী দাতাদের দেয়া মাংস রান্না-বান্না করার জন্য তেল মসল্লা আনুসাঙ্গিক রন্ধন সামগ্রী কোরবানীর চামড়া বিক্রির খাত থেকে পেয়ে থাকে। এবার সেই সুযোগটাও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হারিয়েছে। বর্তমান সরকার হতদরিদ্রদের জীবনমান পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তবে দেশে দৈব দূর্বিপাকে এমন কিছু ঘটনা জন্ম নিচ্ছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এসব অপকর্মের দায় সরকারের ঘাড়ে যাচ্ছে। কারণ সাজানো বাগানের সৌন্দর্য নষ্ট করতে একটি হুতুম পেঁচাই যথেষ্ট। দেশে মুখ খুলে প্রতিবাদ করার সুযোগও তেমন নেই। এতিমের হক মেরে খাওয়া কোটিপতিদের বিরুদ্ধে হয়তো সরকার কোন ব্যবস্থা নেবেনা। কারণ তাদের হাত অনেক লম্বা। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে। চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সূত্র হচ্ছে ‘তেলা মাথায় তেল ঢালো, ন্যাড়া মাথায় বেল মারো’। দেশে খুন, ধর্ষণ ও নৈরাজ্য বেড়েই চলছে, তাই বলে কি কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমার পিছনে কি কোন যুক্তি আছে? এতিমের হক যারা ধ্বংস করেছে তারা বিচারের কাঠ গড়ায় না আসলেও খোদায়ী বিচারের হাত থেকে নিস্তার পাবেনা। বাজারে নিন্মমানের এক জোড়া চামড়ার স্যান্ডেল/জুতার মূল্য যদি ১/৩ হাজার টাকার কমে পাওয়া যায়না। ভাল মানের একটি চামড়ার ওয়ালেট/বেল্ট ৫শ/১ হাজার টাকার কমে মিলে না। অথচ লাখ টাকায় ক্রয় করা একটি গরুর চামড়া দু’শ টাকায় বিক্রি করতে না পারার পিছনে রহস্য কি? ঈদের পর আবার ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া রপ্তানির জন্য বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সে ক্ষতি কোনদিন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবেনা। দেশে হলমার্ক, শেয়ার বাজার কেলেংকারির হোতারা দিব্বি আরামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চামড়া সিন্ডিকেটের হোতারাও হয়তো নিস্তার পাবে। তবে এতিমের হক ধ্বংস করে যারা ক্ষনিকের জন্য লাভবান হয়েছে বলে মনে করছে তাদের পরিণতি দেখার প্রত্যাশায় দিনাতিপাত করছে এদেশের এতিম, ফকির, মিসকিন ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা। কোরবানির চামড়ার দর পতন প্রসঙ্গে বেরসিক এক ব্যক্তি মন্তব্য করতে শোনা গেছে “ওলট পালট করে দে মা, লুটে পুটে খাই, এসব যেন আল্লাহ্ ছাড়া দেখার কেউ নাই”। প্রসঙ্গক্রমে বাদশা আকবরের সময়ের একটি গল্পের অবতারণা করে লেখাটি শেষ করতে যাচ্ছি। বাদশা আকবর এক সময় তার প্রধান উপদেষ্টা বীরবলের কাছে জানতে চাইলেন, বেগুন ভর্তা খেলে কি কি উপকার হয়? বীরবল উত্তর দিলেন হুজুর বেগুন ভর্তা খেলে রক্তা বাড়ে, যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়, চোখের দৃষ্টি বাড়ে, আরো অনেক কিছু। বীরবলের পরামর্শে বাদশা আকবর নিয়মিত বেগুন ভর্তা খাওয়া শুরু করল, পরে দেখা গেল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এতে বাদশা আকবরের এলার্জি বেড়ে গেল, লুচ মোসন শুরু হল, শরীর পানি শূন্যতা শুরু হল। তিনি চলক শক্তিহীন হয়ে পড়লেন। এ সময় বীরবলকে দেখে বললেন, তুমি বেগুন ভর্তার এত উপকারিতার কথা বলেছো, যা খেয়ে আমার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। তখন বীরবল জবাব দিলেন, হুজুর বেগুনের অর্থ হচ্ছে যার কোন গুন নাই। নিয়মিত খেলে অনেক সমস্যা হয়। এ সময় বাদশা বললেন, প্রথমে কি বলেছো এখন কি বলছ? বীরবল উত্তর দিলেন, হুজুর আমি বেগুন ভর্তার চাকুরি করি না। আপনার চাকুরি করি। আপনার যা ভাল লাগে তার ভালোর দিকই বলব। আর যা খারাপ লাগে তার খারাপ দিকই বলব। মনে হয়, জাতি বীরবলের মত কিছু দুষ্ট চক্রের খপ্পরে পড়েছে।

তাং- ১৭.০৮.২০১৯ ইং।