মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় টানা বর্ষনে পাহাড়ি ঢলে শঙ্খ নদীর বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশে অব্যাহত থাকায় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত শনিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে বড়দুয়ারা থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়ক বায়তুল ইজ্জতের আংশিক এলাকা ছাড়া পুরোটাই বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কেরানীহাট এলাকায় গতকাল মহাসড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। শিশুদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। শনিবার ভোর থেকে হাজারও মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বের হন।
নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাজালিয়া মীর পাড়া এলাকায় শঙ্খের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সাতকানিয়ার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন ছয়দিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। অনেকে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার পর দুরে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। জনার কেঁওচিয়ার বাসিন্দা মহিউদ্দন জানান, এমন ভয়াবহ ১৯৯৭ সালের পর দ্বিতীয় বার দেখলাম। হঠাৎ পানি বেড়ে এখানকার সব বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। সবাই যার যার পাশের দুই তলা ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার মসজিদ, অধিকাংশ সড়ক, ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মসজিদে পানি প্রবেশ করায় মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে ব্যাহত হচ্ছে। নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন আমিলাইষ ও চরতী ইউনিয়নে পানির স্রোতে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরের বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গত কয়েকদিনে ওই দুই ইউনিয়নে ৫০টির মতো ঘর নদীতে
বিলীন হয়েছে গেছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাৎক্ষণিক দুর্যোগ পরিস্থিতিতে পানিবন্দী ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে ২৫শ পরিবারকে চাল দেয়া হয়েছে। অনেকেই নিজ উদ্যোগেও কিছু কিছু এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবেছে দক্ষিণ ঢেমশা, কেঁওচিয়া ও বাজালিয়ার বড়দুয়ারা এলাকা। এছাড়া ছদাহা, নলুয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, খাগারিয়া, আমিলাইষ, চরতী, সোনাকানিয়া, পশ্চিম ঢেমশা, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় বন্যায় মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রধান সড়কটির আনুফকির দোকান এলাকায় পানিতে ডুবে থাকায়
সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
বড়দুয়ার বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন জানান, বন্যার পানি বেড়ে এলাকার সব বাড়ি ডুবে যাওয়ায় বেশিরভাগ লোকজন ঘর ছেড়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছে। না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে হাজারো মানুষ। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় রাতের অন্ধকারে খুব কষ্টের মধ্যে পার করছেন। শুকনো খাবার প্রয়োজন।
পানি প্রবেশ করায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। পরিবারের লোকজন মোঃ হাসান জানান, গত কয়েকদিন ধরে অনেকের ঘরে চুলায় আগুন জ্বলছেনা।বন্যা কবলিত এলাকায় খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ বিতরণও চোখে পড়ছে না। রান্না করতে না পারায় বিশেষ করে এখানে শুকনো খাবার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. রেজাউল করিম জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরতী দুরদুরী সড়কটিও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। আমিলাইষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম হানিফ জানান, বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত নদী ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ২শ পরিবারকে সরকারি চাল দেয়া হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, বাজালিয়ার মীরপাড়া এলাকায় শঙ্খের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পুরো উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহায়তা করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রতিদিন পানিবন্দী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নিচ্ছি।
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, পুরো সাতকানিয়া বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সরকারি তরফ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। আরো ত্রাণ দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ধনাঢ্য ও দানশীল মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি