মো.মনজুর আলম, চকরিয়া:

পড়া-লেখার মাঝখানে স্কুল পালানো বা ঝরে পড়া অনেকটা স্বাভাবিক বিষয়। নতুন কিছু নয়। ঝরেপড়া রোধে সরকারের শিক্ষামন্ত্রনালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করলেও সব জায়গায় তা বাস্তবায়ন শতভাগ সম্ভব হচ্ছেনা। বিশেষ করে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে এ অবস্থা বেশি লক্ষনীয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যালয়ের আশ-পাশ ও এসএমসি‘র কমিটি থাকলেও তা নাম মাত্র। শিক্ষার উন্নয়ন চিন্তার চেয়ে তাদের ব্যক্তিগত খবরদারির প্রতিই বেশি খেয়ালী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়ে শতভাগ সফলতায় এগিয়েছেন সমাজকর্মী গিয়াসউদ্দিন গাজী। একটি শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে এলাকায় এ মহতী কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার অজপাড়ার বাসিন্দা সমাজকর্মী উচ্চ শিক্ষিত গিয়াসউদ্দিন গাজী ২০১৬ সালে প্রতিষ্টা করেন শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন (ইএসডিও)।

এ প্রতিবেদকের কাছে তিনি জানান, গ্রামের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হতদরিদ্র, গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া-শুনা করে। পারিবারিক, সমাজিক ও পারিপার্শিকতা ইতিবাচক না থাকায় স্কুলগামি অন্তত ৫০ভাগ শিক্ষার্থী ৫শ শ্রেনী শেষ না করেই স্কুল ত্যাগ করে। আবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও একই হাল দেখা গেছে। তিনি আরও জানান, তার গ্রামে ঝরে পড়া রোধে তিনি একটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা মাথায় আনেন। এ জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন (ইএসডিও)। ইএসডিও এর সদস্যরা ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা শুরু করে প্রথমে। তার পরে শিক্ষার্থীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে সন্তানের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সাথে আলোচনা করে বিদ্যালয়-বিমুখ ছেলেদের বিদ্যালয় মুখি করার ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি তারা বাল্য বিবাহ রোধেও কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। এ ভাবে তারা দীর্ঘ বছর প্রচেষ্টায় শতভাগ সফলতা অর্জন করেন।

ইতিমধ্য তাদের উপকারভোগী অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে অধ্যায়নরত আছে। এর মধ্য ২০১৯ সালে দু‘জন এসএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে ও একজন এ+ পেয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম সরকারী মডেল কলেজে একাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। অন্যজন চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যায়নরত আছেন। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্য বাল্যবিবাহের হাত থেকে বেচে যাওয়া কিশোরী ও দিনমজুর রাজমেস্ত্রীর কর্মরত ছেলেরাও রয়েছে। ইএসডিইও এর প্রতিষ্টাতা এম গিয়াস উদ্দিন গাজী পরামর্শে এসব ছেলে মেয়েরা আবারও পূনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরিয়ে আসে। এসব কাজ করে বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানটি চকরিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে।

এ দিকে( ১২ জুলাই) শুক্রবার ইএসডিও কার্যলয়ে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে একটি মোটিভেশনাল সেমিনার অনুষ্টিত হয়। মোটিভেশনাল সেমিনারে বক্তব্য দেন উপকারভোগী ইএসডিইও সদস্য মোঃ তুহিন চট্রগ্রাম সরকারী মডেল কলেজ। মোঃ ফাহিম, আব্দুল মোনাফ, মোঃ ইউসুফ, মোঃ আরফাত, মোঃ রিদুয়ান আর মোটিভেশন সেমিনার সন্চলনা করেন মোঃ নুরুউদ্দিন জাহেদ (টুটুল) সহকারি শিক্ষক ডুলাহাজারা সরকারী প্রাথমিকবিদ্যালয় । ইএসডিও প্রতিষ্টাতা এম গিয়াস উদ্দিন গাজী বলেন, অনেক সময় সুযোগের অভাবে দরিদ্র অসহায় শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ হয়না। একটু সুযোগ ও সহযোগীতায় অনেক ক্ষেত্রে জীবন বদলে দিতে পারে। সে লক্ষ্যে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্যই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্হা (ইএসডিও)প্রতিষ্টা করা হয়েছে।

এম গিয়াস উদ্দিন গাজী আরও বলেন। সরকারী -বেসরকাররী সহযোগিতা পেলে আমাদের কার্যক্রম আরো গতিশিল করা সম্ভব হতো। ঝড়ে পড়া রোধসহ শিক্ষার হার বাড়ানোর পাশা-পাশি এর গুনগত মানোন্নয়ন ও সম্ভব হতো।