মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম:

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় টানা বর্ষনে পাহাড়ি ঢলে শঙ্খ নদীর বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশে অব্যাহত থাকায় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বড়দুয়ারা
মাহালিয়া রাস্তার মাথা এলাকার প্রায় ৭শ মিটার সড়ক ৪ফুট পানিতে ডুবে থাকায় গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। সড়কে চলছে নৌকা। যাত্রীরা নৌকা ও ভ্যানে পারাপার হচ্ছে। নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাজালিয়া মীর পাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে শঙ্খের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে ২ লক্ষ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। পানি বন্দী এলাকার লোকজন চারদিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার মসজিদ, অধিকাংশ সড়ক, ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মসজিদে পানি প্রবেশ করায় মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে ব্যাহত হচ্ছে। নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন আমিলাইষ ও চরতী ইউনিয়নে পানির ¯্রােতে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরের বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

গত কয়েকদিনে ওই দুই ইউনিয়নে ৫০টির মতো ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে গেছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাৎক্ষণিক দুর্যোগ পরিস্থিতিতে পানিবন্দী ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে ২৫শ পরিবারকে চাল দেয়া হয়েছে। অনেকেই নিজ উদ্যোগেও কিছু কিছু এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবেছে দক্ষিণ ঢেমশা, কেঁওচিয়া ও বাজালিয়ার বড়দুয়ারা এলাকা। এছাড়া ছদাহা, নলুয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, খাগারিয়া, আমিলাইষ, চরতী, সোনাকানিয়া, পশ্চিম ঢেমশা, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় বন্যায় মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রধান সড়কটির আনুফকির দোকান এলাকায় পানিতে ডুবে থাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে।

বড়দুয়ার বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন জানান, বন্যার পানি এখনো বাড়ছে। ঘরে পানি প্রবেশ করায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। পরিবারের লোকজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে থাকায় অনেক পরিবার না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে অনেকের ঘরে চুলায় আগুন জ্বলছে না। বন্যা কবলিত এলাকায় খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ বিতরণও চোখে পড়ছে না।

চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. রেজাউল করিম জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরতী দুরদুরী সড়কটিও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। আমিলাইষ
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম হানিফ জানান, বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত নদী ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ২শ পরিবারকে সরকারি চাল দেয়া হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, বাজালিয়ার মীরপাড়া এলাকায় শঙ্খের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নদীর পানি লোকালয়ে বেশি প্রবেশ করছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে ও টানা বৃষ্টিতে বন্যায় উপজেলায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার পরিবারকে বৃহস্পতিবারে চাল দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন পানিবন্দী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের খুঁজ খবর
নিচ্ছি।