শাহীন মাহমুদ রাসেল:

টানা বৃষ্টি, উজান ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কক্সবাজারের প্রায় সব নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ৫ দিনে কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণের কারণে বাঁকখালী, মাতামুহুরি, রেজুখালের পানি বেড়েছে। জেলার অন্যান্য নদীগুলোর পানিও বাড়ছে। ইতোমধ্যেই বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট, রাজারকুল, মিঠাছড়ি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, গত সপ্তাহে জেলার নদীগুলোতে পানি কমার প্রবণতা থাকলেও রবিবার থেকে তা আবারো বাড়তে শুরু করেছে। অন্তত আরো দুদিন বাঁকখালী নদীতে পানি বাড়বে। এ ছাড়া জেলায় বিভিন্ন এলাকায় আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার কক্সবাজারে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নদীতে পানি বৃদ্ধির প্রবণতা আরো বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র মতে, বৈশাখের শুরুতেই বড় ধরনের বৃষ্টিপাত হয়নি। মাঝেমধ্যে ছিল বজ্রপাতও। জ্যৈষ্ঠ মাসেও বজ্রপাত হয়েছে, আষাঢ মাসে সামান্য বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে মুসলধারে। বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আষাঢ়ের শুরুতে বজ্রপাত কিছুটা কমলেও বৃষ্টির তীব্রতা বেড়েছে। অতি বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটবে বলে মনে করেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। সবমিলিয়ে এবার মাঝারি থেকে ভয়াবহ বন্যার একটা আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বন্যার আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় কয়েকদিন আগ থেকেই সতর্ক রয়েছে। এ জন্য তারা দফায় দফায় বৈঠক করে জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। জেলায় নগদ টাকা, চাল ও ঢেউটিন বরাদ্দ দিয়েছে। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

জানা গেছে, আবহাওয়ার খবর পর্যালোচনা করে এ বছর বর্ষা মৌসুমে জেলার মধ্যে সদর, রামু, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়ায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গত (৭ জুলাই) টেকনাফ থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেছে জেলা প্রসাশন। অন্যদিকে বন্যার সময় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব দুর্যোগ ব্যবস্থা অধিদপ্তরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলা উপজেলার স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার ভবনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখার জন্য বলা হয়েছে, যেন বন্যা দেখা দেয়া মাত্রই বন্যাকবলিত মানুষজনকে আশ্রয় দেয়া যায়।

এদিকে ৫ দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে রামু-সদরের বাঁকখালী নদীর পানি বেড়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত মাতামুহুরি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৬২ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকাসহ গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারে পৌর শহরের , কলাতলী, উপজেলা গেইট, নুরপাড়া, তারাবানিয়ার ছড়া, রুমালিয়ার ছড়াসহ কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচলসহ মানুষের চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি আরোও জানান, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা আছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তারা জানান, জেলার প্রতি উপজেলায় চাল ও নগদ টাকা প্রদান করা হবে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, বন্যা-দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ এ নিয়ে কাজ শুরু করছে।