আমাদের সময় : বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা ঈদুল ফিতরের আগে বা পরে যখনই হোক, শিক্ষকরা জুলাই মাস থেকে সুবিধা পাবেন। ২০১০ সালে সর্বশেষ ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে সরকার। এর পর থেকে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। নতুন সরকার গঠনের পরও পাঁচ মাস অতিবাহিত হচ্ছে, কিন্তু চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। এখনো প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন ৭৫ হাজার নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দফায় দফায় আন্দোলনের পর গত ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের দাবির মুখে আগস্ট মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করে।

এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদন নেয়। তখন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আবেদন করেছিল। এর পর প্রাথমিক যাচাইয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ২ হাজারের বেশি যোগ্য (ফিটলিস্ট) ভুক্ত হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বয়স, শিক্ষার্থীসংক্রান্ত তথ্য, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার, অবকাঠামো ইত্যাদি বিবেচনায় নম্বর পায় প্রতিষ্ঠানগুলো।

সব মিলিয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে গ্রেডিং করা হয়। কিন্তু পরে আবেদন সরেজমিন যাচাই-বাছাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই প্রক্রিয়ায় ঝুলে যায় এমপিওভুক্তির কার্যক্রম। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার আমাদের সময়কে এ বিষয়ে বলেন, আমরা দ্রুত এমপিওভুক্তির ঘোষণা চাই।

অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন। অনেকের চাকরির বয়স আছে মাত্র ৫ থেকে ৭ বছর। এ কারণে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সবাইকে একসঙ্গে এমপিওভুক্তি করে এ সমস্যার সমাধান করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। এত বছর পর কোনোক্রমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক এমপিওভুক্তি করা সমীচীন হবে না। স্বীকৃতপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নিলে অসুস্থ প্রতিযোগিতার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।

এর সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়বে। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির একটি সামগ্রিক স্বচ্ছ সমাধান প্রত্যাশা করি। সে ক্ষেত্রে বর্তমান বাজেটে অর্থ বরাদ্দ যথেষ্ট না হলে আমরা কম বেতন নিতে রাজি আছি। পর্যায়ক্রমে কয়েক বছরে বেতন সম্পন্ন করা হলেও আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের দাবি সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তি করতে হবে।

শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আসন ঈদুল ফিতরের আগে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসছে কিনা, জানতে চাইলে গতকাল রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, এমপিওভুক্তির ঘোষণা ঈদের আগে বা পরে যখনই হোক, জুলাই মাসে কার্যকর হবে এটা বলতে পারি।

বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭ হাজার ৮১০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৬২ জন। এ খাতে মাসে সরকারের ব্যয় হয় ৯৪২ কোটি টাকা। অন্যদিকে দেশে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫ হাজার ২৪২টি।

এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৮০ হাজার। একাডেমিক স্বীকৃতির বাইরেও আরও দুই হাজার নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।