– মোহাম্মদ তালুত
ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ হল……মিড ডে মিলের কার্যক্রম চলছে কয়েকটায়……বেহাল দশা…..বিশেষত খাবারের মান খুবই খারাপ……যে বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে, তার মান নিয়েও আমার সন্দেহ আছে……আমিষ সবচেয়ে বেশি দরকার এই বয়সের বাচ্চাদের, কিন্তু আমিষের জোগান বড্ড অপ্রতুল।
মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ছাড়া ভাল মানের আমিষের সোর্স এখনও মিলেনি। হার্বাল আমিষের মান সর্বদাই অ্যানিম্যাল প্রোটিনের চেয়ে নিচু।
কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার বুনো (feral) উটের কথা শুনেছিলাম (আসলে IELTS
পরীক্ষায় একটা প্যাসেজে ছিল)। বিংশ শতকের শুরুতে ভারত থেকে উট যায় সেখানে, তারপরই শুরু হয় ম্যারাথন রেইটে বংশবিস্তার।
এখন নাকি প্রায় দশ লক্ষ উট চরছে, বুনো প্রান্তর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, সাফ করে ফেলছে গাছ গাছালি, পরিবেশের সবিশেষ ক্ষতি করছে। প্রতি ৮ বছরে দ্বিগুণ হচ্ছে উটের পপুলেশন!
মানে, আর আট বছর পর হবে বিশ লক্ষ। এমন অবস্থায়, সেদেশি সরকার উট নিধন শুরু করতে চাইছে। লাখ লাখ উট নাকি মেরে ফেলা হবে। এছাড়াও পুরুষ উট নপুংসক বানিয়ে বংশবিস্তার রুখতে নেমেছে মাঠে। এইখানে আমার একটা আইডিয়া আছে। আমরা কি পারি না, এদেশ থেকে কিছু কসাই পাঠিয়ে ওখানে এক্সেস উটের মাংস ড্রাই করে এদেশে আনতে? আমার তো মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ান সরকার ফ্রীই দেবে।
এই শুঁটকি মাংস আমরা আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের দিতে পারি, প্রচুর পুষ্টিসমৃদ্ধ এই মাংস বাচ্চাদের দেহ ও মস্তিষ্কের ফাউন্ডেশন মজবুত করবে। প্রতি বছর ১০%-১২% হারে বাড়ছে উটের সংখ্যা, আমরা শুধু বাড়ন্তটুকু নেব, যেন অস্ট্রেলিয়া সরকারের উট মারা প্রকল্প আর না নিতে হয়। যেসব উট মাংসের জন্য বধ করা হবে, সেগুলো বাছাই করতে হবে বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে যেন একটা ব্যালান্সড এবং ডিজায়ার্ড সিচুএশন বজায় থাকে। যেমন, বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন বয়সের বা লিঙ্গের কতগুলো উট বধ করা যাবে তা ক্যাল্কুলেশন করে নিতে হবে। উটগুলো আছে অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক মরুঅঞ্চলগুলোতে, ওখানে মাংসের শুঁটকি বানাতে বড়জোর এক থেকে দুই দিন লাগবে। এই মাংস জাহাজে করে আনতে হবে দেশে এবং বিলাতে হবে।
সামান্য মশলায় সেদ্ধ বা কাবাব করে বাচ্চাদের খাওয়াতে পারলে দারুন হবে। কম মশলায় এবং বিনা তেলে, সামান্য খরচে রান্না করার কিছু দারুন পদ্ধতি আছে। যব গমের বিস্কুটের আমিষের চাইতে এই প্রোটিন অনেক বেশি হাই ক্লাসের, সন্দেহ নাই। সাথে মিলছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্কও। উটের যে সাইজ, তাতে প্রতিদিন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের মাথাপিছু অন্ততঃ ১০০ গ্রাম মাংস খাওয়ানো যাবে। মাংস প্রায় ফ্রীতে পেলে কৃত্রিম ভিটামিনযুক্ত পুষ্টিহীন শুকনো বিস্কুটের দামের চাইতে খুব বেশি হবে না। সবমিলিয়ে এই কাজ করতে পারলে বাংলাদেশের জন্য দারুন হবে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করা দরকার শিগগিরই, অন্য কেউ বাগিয়ে ফেলার আগেই।
লেখক : বাংলাদেশ সরকারের একজন সিনিয়র সেক্রেটারি।