মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা:
বান্দরবানের লামায় দেশীয় তৈরী চোলাই মদ খাইয়ে স্বামী পরিত্যক্ত এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অংহ্লারী মার্মা পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানয় স্থানীয়রা। তবে ওই নারী গণধর্ষনের ঘটনাটি সত্য নয় দাবী করে বলেন, মানসিক কষ্টে থাকায় আমি নিজের ইচ্ছায় মদপান করতে গিয়েছিলাম।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ৬ বছর বয়সী এক সন্তানের জননী (২২) কে মদ খাইয়ে মাতাল করে জনৈক সবজি বিক্রেতা নূর হোসেনের নেতৃত্বে ২জন ব্যাক্তি পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য মো: কামাল উদ্দিন ও শহিদুজ্জামান মিলে অপর নারী ইউপি সদস্য আনাই মার্মা সুমির দোকানে বৈঠকে বসেন। পরে বিষয়টি নিয়ে বুধবার শালিশী বৈঠকের কথা বলে ধর্ষক ও ধর্ষিতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই প্রসঙ্গে জানতে ইউপি মেম্বার কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা কোন বিচার করিনি। মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। ইউপি মেম্বার মো. শহিদুজ্জামান বলেন, মেয়েটি মাতাল থাকায় আমরা পরেরদিন বৈঠকে বসার কথা বলেছিলাম। মহিলা মেম্বার আনাই মারমা সুমি জানান, আমি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এই ধরনের একটি খবর পেয়ে অপর দুই মেম্বারসহ বৈঠক হয়। কিন্তু অভিযুক্ত নারী ও পুরুষ দুইজনই মাতাল হওয়ায় বিস্তারিত জানা যায়নি।

এই বিষয়ে ভিকটিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, একই ইউনিয়নের বড়ছনখোলা এলাকার জনৈক নুর মোহাম্মদের সাথে আমার ১ বছর যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক চলছে। আমাদের মাঝে কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার (১৫ এপ্রিল ২০১৯ইং) দিবাগত রাত ১২টায় নুর মোহাম্মদের সাথে আমার বাড়িতে শারীরিক মেলামেশা হয়। সে আমাকে ব্যবহার করলেও বিয়ে করতে রাজী হয়নি। তাই মনের কষ্টে মঙ্গলবার দুপুরে নুর হোসেনের সাাথে নিয়ে অংহ্লারী মার্মা পাড়ায় গিয়ে মদপান করেছি। নুর হোসেনকে আমি মামা বলে ডাকি। সেখানে রুবেল নামে একজন ব্যক্তিও উপস্থিত ছিল। মদপানের পর আমি ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে ইউপি মেম্বার কামাল উদ্দিন চকিদার আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে আমাকে নিয়ে আসে এবং আমার মায়ের জিম্মায় দেয়। নুর হোসেন ও রুবেল এর সাথে আমার কোন শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। নুর মোহাম্মদ আমাকে বিবাহ করবে বলে ভোগ করে এখন বিবাহ করতে রাজী হচ্ছেনা। আমি তার বিচার চাই। ওই নারী বলেন, মেম্বাররা আমার কোনো অভিযোগ না শুনে সাদা কাগজে টিপসই নিয়ে বলেন, যা হয়েছে এখানেই শেষ। কোনো অভিযোগ করবে না। তাঁরা নূর হোসেন ও রুবেলকে বাড়ি চলে যেতে বলেন।

অংহ্লারী মার্মা পাড়ায় থোয়াইচাচিং মার্মার বাড়িতে মদপান করে নুর হোসেন, রুবেল ও ভিকটিম। থোয়াইচাচিং মার্মার স্ত্রী উচিমে মার্মা বলেন, মদপানের পরে মেয়েটি মাতাল হয়ে পড়লে পাড়ার কারবারী কামাল মেম্বারকে ফোন করে বলে। মেম্বার চকিদার দিয়ে বদুঝিরি এলাকার নুর হোসেন, কুমারী এলাকার রুবেল ও ভিকটিমকে নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে লামা থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহার নেতৃত্বে অভিযানে নামে থানা পুলিশ। রাতেই ভিকটিম ও নুর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লামা থানায় আনা হয়।

এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, ভিকটিম গণধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকারের পাশাপাশি মামলা করতে চাচ্ছেনা। তবে ভিকটিম বড়ছনখোলা এলাকার নুর মোহাম্মদের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ও দৈহিক সম্পর্কের কথা বলছে। সে বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। নুর হোসেনকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।