আবদুল আজিজ, বাংলা ট্রিবিউন, কক্সবাজার:
রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে কোনও ধরনের খাদ্য সংকট না থাকলেও গত বছরের তুলনায় এবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। পুরাতন ও নতুন মিলে এখন ১১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছে। হঠাৎ মানুষের বাড়তি চাপে প্রথম কয়েক মাস উখিয়া ও টেকনাফসহ পুরো জেলায় কিছুটা খাদ্য সংকট তৈরি হয়। তবে পরবর্তীতে বাজারের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে উঠে। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি এনজিও এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। পরে রোহিঙ্গারা এসব ত্রাণ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি শুরু করে। বিশেষ করে চাল,ডাল ও তেলের পাশাপাশি ত্রিপল,কম্বল ও কসমেটিক সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। এর ফলে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। তবে বর্তমানে শুধু উখিয়া ও টেকনাফ নয়, পুরো জেলার বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।
কক্সবাজার শহরের বড় বাজার,বাহারছড়া বাজার,কানাইয়াবাজার, কালুর দোকান, রুমালিয়ারছড়া বাজার, উপজেলা গেইট বাজার, লিংকরোড বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন বাজারে খাদ্য সংকট স্থিতিশীল থাকলেও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বাজারে টমেটো কেজি ৩০ টাকা, আলু দেশি ৪০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কচু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে শাকসবজির দামও বেড়েছে অনেক। তবে চাল, ডাল ও তেলের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার এলাকার মুদির দোকান ও পাইকারি ব্যবসায়ী স্বজল কান্তি ধর বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে তেমন কোনও সংকট এখনও দেখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া অতিরিক্ত ত্রাণগুলো খোলা বাজারে বিক্রি করে দেওয়ায় স্থানীয়ভাবে সংকটের প্রভাবটি পড়েনি। তবে আগামীতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে।

কক্সবাজার বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজারে চালের মূল্য তেমন বাড়েনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করে এমন কিছু সংস্থা আমার কাছ থেকে চাল নিয়ে যায়। এ কারণে স্থানীয় পাইকার যারা ছিল তাদের চাল ক্রয় কমে এসেছে।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে অবস্থানরত ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘চাল, ডাল ও তেলের বাজার স্বাভাবিক থাকলেও অন্যান্য পণ্য যেমন তরিতরকারি, শাকসবজির দাম চড়া। গত এক বছর ধরে এই অবস্থা চলছে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ও কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন,‘অল্প সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা না হলে কক্সবাজারে খাদ্য সংকট বাড়বে। একই সঙ্গে অর্থনীতির ঝুঁকি এবং অপরাধ দুটোই বাড়বে। পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় স্বাস্থ্যসেবায় ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পে বিশুদ্ধপানির সংকটে পড়েছে। নিত্যপণ্যের বাজার এখনও চড়া থাকায় সংকট সামনে বাড়বে।’
উখিয়া ও টেকনাফে কর্মরত উপ-খাদ্য পরিদর্শক জগদীশ পাল বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রভাবে প্রথমে বিভিন্ন হাটবাজারে পণ্যের বাজার অস্থির থাকলেও এখন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর নিত্যপণ্যের দাম সামান্য বেশি। বর্তমানে টেকনাফে মোটা চাল ২৬ টাকা থেকে ৪০ টাকা, চিকন চাল ২৮ থেকে ৩০ টাকা ও মিনিকেট চাল ৪২ টাকা থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে উখিয়ার হাটবাজারে মোটা চাল ২৮ টাকা, চিকন চাল ৩৫ টাকা ও মিনিকেট চাল ৪৭ টাকা থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন,‘এখন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় কোনও ধরনের খাদ্য সংকট রয়েছে বলে মনে হয় না। কাঁচাবাজার অর্থাৎ শাকসবজির দাম একটু বেশি। অন্যান্য পণ্য সামগ্রী স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিংয়ে আছি। কোথাও কোনও ব্যবসায়ী অনিয়ম করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এস এম তাহসিনুল হক বলেন, ‘দেশের অন্যান্য এলাকার খবর জানি না। তবে এই মুহূর্তে কক্সবাজার জেলায় কোনও খাদ্য সংকট নেই। তবে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজার একটু চড়া। গত বছরের চেয়ে এই বছর ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে খাদ্য সংকটের বিষয়টি বলতে পারবো না।’