নিজস্ব প্রতিবেদক:
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সারা দেশে আওয়ামী লীগ অঙ্গনে উত্তাপ বেড়েই চলছে। তফশীল ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হওয়ায় কক্সবাজারের আট উপজেলায়ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রার্থী হতে আগ্রহীরা নানাভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান পদে আগ্রহীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করার ইঙ্গিত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে জেলার আলোচিত মহেশখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো: হোসাইন ইব্রাহীম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আলম, ধলঘাটা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুল হাসান, মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সাজেদুল করিম এবং মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছমি উদ্দীন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় যোগ্য প্রার্থীর বিষয়টি এখন মহেশখালীজুড়ে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা দিক বিবেচনায় কে হতে পারেন যোগ্য প্রার্থী তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী নিয়ে যে আলোচনা চলছে তাতে প্রায় প্রার্থীই নানা দিক বিবেচনায় পিছিয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান হোছাইন ইব্রাহিম গত ৫ বছরে তেমন উন্নয়নসহ কোন কাজ-কর্ম দেখাতে পারেনি। ভোটারদের সাথে তাঁর যোগাযোগ নেই বললেও চলে। বয়স বেড়ে যাওয়ায় ভোটের মাঠের প্রতিযোগিতার করা যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, ভোটের মাঠে পুরনো মানুষ এবং দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসে জাফর আআলম এমএ। ভোটারদের পছন্দ, মুক্তিযোদ্ধা ও খাটি আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তান, ক্লিন ইমেজের অধিকারী এবং সর্বোচ্চ শিক্ষিত প্রার্থী হিসেবে তিনিই যোগ্যতায় সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে হারলেও সেই থেকে তিনি রাজনীতির পাশপাশি সাধারণ ভোটারদের সাথে মিশে ছিলেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হলেও দলীয় সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। চলতি নির্বাচন প্রক্রিয়াও শুরু থেকে তিনি বিভিন্ন সভা ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভোটারদের কাছে একটি অতি পরিচিত মুখ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। সব বিবেচনায় তাকেই আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছেন ভোটাররা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ইয়াবা ব্যবসার তালিকায় নাম থাকায় ব্যাপক বিতর্কিত হয়েছেন মো: শরীফ বাদশা। এনিয়ে পত্র পত্রিকায় মিডিয়ায় দীর্ঘদিন বেশ লেখালেখি হয়েছে। এতে দলেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ কারণে তার দিক ভোটাররা অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে বিতর্কিত শরীফ বাদশাকে কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না ভোটাররা।
এছাড়াও অন্য প্রার্থীদের মধ্যে কামরুল হাসান বর্তমানে ধলঘাটার চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। এলাকা বিবেচনায় তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র ৫/৬ হাজার ভোট। অন্যদিকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদে থাকায় তাকে উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রার্থীতার বিবেচনা নিতে পারছে না ভোটাররা। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাতারবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি ছমি উদ্দিনকে উপজেলার ভোটাররা এখন পর্যন্ত তেমন চিনেই না। অন্যদিকে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতিতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই মামলায় তার ভাই জেলও খেটেছে। এছাড়া তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিএনপি জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে খোদ মাতারবাড়িতেই মতবিরোধ রয়েছে। তাই তাকে কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছে না ভোটাররা।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মোস্তফা আনোয়ারের রাজনীতির সাথে আড়ি নেই। তিনি একেবারেই নতুন। পিতৃ পরিচয়ে পরিচয়ের সূত্র ধরে সবে মাত্র আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে। রাজনীতিতে জন সম্পৃক্ততা, মাঠের রাজনীতি এবং কোনো অভিজ্ঞতাই নেই তার। ফলে তাকেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিতে পারছে না ভোটাররা।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সাজেদুল করিম। তার এক ভাই আজিজুল করিম জয় উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে যুবদলের শীর্ষ নেতা। তার পিতা মোস্তাক লুতা মিয়া বিএনপির বড় ডোনার হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিস্তীর্ণ প্যারাবন কেটে চিংড়ী ঘের করায় বন বিভাগের কয়েকটি মামলাও রয়েছে। এসব কারণে তিনিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে কোনো যোগ্যতা রাখে না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দূর্নীতি মামলায় যারা আসামী হয়েছে তাদেরকে নমিনেশন দেবেন না। যাদের নাম ইয়াবা পাচারের তালিকায় আছে তাদের নমিনেশন দেবেন না। ১২ বছর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা যাদের নেই তাদের নমিনেশন দেবেন না। যাদের বয়স ৬০ বছরের উপরে চলছে তাদেরকেও নমিনেশন দেবেন না বলে দলীয় হাই কমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া যারা সম্প্রতি সংসদ নির্বাচনে যারা ভোট প্রার্থনা, প্রচার প্রচারনায়, মিটিং মিছিলে অংশ গ্রহণ করেন নি তাদেরও মনোনয়ন পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।