নিউজ ডেস্ক::
চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার ঘটনায় একাধিক পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু। তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি শারীরিক সম্পর্কের কথা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে স্বীকার করেন।

গত ৩১ জানুয়ারি পরকীয়ার কারণে স্ত্রীকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেন এই চিকিৎসক। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মিতুকে আদালতে হাজির করে ৭দিন রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশসহ বিভিন্ন ‘গাইডলাইনের’ আলোকেই তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে তৃতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ আবদুল কাদের।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে একজন নারী কনস্টেবলও সাথে রাখা হয়।

শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তিন দিনের রিমান্ড শেষ হয়।

সূত্রে জানা যায়, মিতুকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রথম দুইদিন অনৈতিক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে আসছিলেন মিতু। উল্টো মিতুকে ভয় দেখিয়ে মোবাইলে বক্তব্য রেকর্ড, পাসপোর্ট ও গ্রীনকার্ড নিয়ে ফেলার দাবি করেছে জিজ্ঞাসাবাদে। জিজ্ঞাসাবাদে অন্যের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করলেও অনৈতিক সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। রিমান্ডের শেষদিন মিতু তার সুর পাল্টিয়ে বলেন ‘পেটেল’র সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক ছিল’। অবশ্য এর আগে মিতু একটি ভিডিওতে দোষ স্বীকার করেছেন। মিতুর স্বামী ডাক্তার আকাশ স্ত্রীর পরকিয়ার কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে লেখেন, শোভন নামে চুয়েটের ৮ ব্যাচের এক ছেলের সাথেও হোটেলে রাত কাটায় মিতু। এছাড়া মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যাচম্যাটের সাথে শারীরিক সম্পর্কের বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। এসব বিষয়েও দোষ স্বীকার করেছেন মিতু।

চান্দগাঁও থানার ওসি মো. আবুল বাসার বলেন, ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালতের নির্দেশে তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে তিনদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অনৈতিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ আবদুল কাদের বলেন, ‘চিকিৎসক আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো এতদিন অস্বিকার করলেও আজকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আমেনা বেগম মহোদয়ের কাছে একাধিক ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। আগামিকাল তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। এই ঘটনায় এজহারভুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।’

উল্লেখ্য, ৩১ জানুয়ারি রাতভর আকাশের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমূল ঝগড়া হয়। ওই সময় আকাশের বাসায় একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। যে ভিডিওতে মিতু তার একাধিক বন্ধুর সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পকের কথা স্বীকার করে। দু’জনের ঝগড়ার একপর্যায়ে মিতুর বাবা ইঞ্জিনিয়ার আনিসুল হক চৌধুরী দিবাগত রাত ৪টার দিকে স্বামীর বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে যান। এরপর আকাশ ফেসবুকে মিতুকে জড়িয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে শরীরে ইনসুলিন পুশ করে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনার পরদিন শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টায় সিএমপির চান্দগাঁও থানায় চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে প্রধান আসামি করে মোট ৬ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন আকাশের মা জোবেদা খানম ।

আসামিরা হলেন, তানজিলা হক চৌধুরী মিতু (২৯), মোছাম্মৎ শামীম শেলী (৪৯), মোহাম্মদ আনিছুল হক চৌধুরী (৫৫), সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা (২১), ড. মাহবুবুল আলম (২৮) এবং পেটেল।

এছাড়া অজ্ঞাত আরও চারজনের নাম এজেহারে উল্লেখিত রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসক আকাশের আত্মহত্যায় তার ফেসবুক আইডিতে স্ত্রীকে জড়িয়ে স্ট্যাটাস এবং আকাশের পরিবারের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নগরীর নন্দনকানন এলাকার একটি বাসা থেকে আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে আটক করে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। আটকের পর মিতুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শাহ আমানত (র.) মাজার এলাকা থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। একইসঙ্গে মোস্তফা মোরশেদ আকাশের ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও পুলিশ জব্দ করেছে। পরে শুক্রবার ভোর থেকে আকাশ তার ফেসবুকে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ও বিভিন্ন ছবি সম্বলিত যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তা ডিলিট করে দেওয়া হয়। মিতুকে গ্রেফতারের পর গত ২ ফেব্রুয়ারি ৭দিন রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত ৪ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয়। পারিবারকসুত্রে জানা যায়।

২০১৬ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. আকাশের সঙ্গে মিতুর বিয়ে হয়। বিয়ের পর পড়াশোনার জন্য ইউএসএ চলে যায় মিতু। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় থাকতেন। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি দেশে ফেরে মিতু। এরপর দু’জনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ আরো প্রকট হয়ে উঠে। মোস্তফা মোরশেদ আকাশ চন্দনাইশ উপজেলার বরকল বাংলাবাজার এলাকার আব্দুস সবুরের ছেলে। তিনি পরিবারসহ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লক ২ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বাড়ি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া বড়ঘোপ এলাকায়। মিতুর পরিবার পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের ৪০/এ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন।

সিভয়েস