ছবি : মায়ের লাশ দেখার জন্য পুলিশের গাড়িতে সন্তান!
শাহিদ মোস্তফা শাহিদ,কক্সবাজার সদর :

কত ছেলে হারা মা-বাবার আর্তনাদ,মা-বাবা হারা ছেলের কত আহাজারী! স্বজন হারা শোকার্ত পরিবারের বুক ভরা আকাশ সমান কষ্ট। করুন নিয়তির মাঝেও সারাক্ষণ নিজেকে তৈরি করে শোককে দ্রোহে পরিণত করার মহান ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলা শোকাহত ব্যক্তিদের।পৃথিবীতে জন্ম গ্রহন করলে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়। যে মৃত্যু স্বাভাবিক হোক আর অস্বাভাবিক হোক।স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে না আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, শুভানুধ্যায়ীরা।টিক তেমনি মেনে নিতে পারেনি অবুঝ মোহাম্মদ ২ বছর ৫ মাস বয়সী এক শিশু। কে জানতে তার এই অল্প বয়সে হারাতে হবে গর্ভধারনী মা রুমা আক্তারকে? জীবনে নেমে আসবে করুন পরিনতি! মোহাম্মদ ঈদগাঁও ইউনিয়নের মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার ওয়াহিদুল্লাহর পুত্র। গত জানুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ তার ঘরে ঘটে যায় এক ভয়াবহ ট্রাজেডি! মোহাম্মদের বাবা, চাচা,দাদী মিলে মা রুমা আক্তারকে উপর্যপরী নির্যাতন করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে শরীরে নিক্ষেপ করে কেরোসিন। তারপর চুল্লীর মত আগুন দেয় রুমার শরীরে। নিজেকে রক্ষা করতে চিৎকার দেয় রুমা।এগিয়ে আসে পাড়াপড়শী,উদ্ধার করে নেওয়া হয় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে । অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানেও কোন উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৬ দিন পর না ফেরার পথে চলে যায় মোহাম্মদের মা রুমা আক্তার। নিয়ে আসা হয় স্বামীর গ্রামের বাড়িতে।অত্যন্ত সু- কৌশলে দাপন কাঁপনের ব্যবস্থা করছিল স্বামী ওয়াহিদুল্লাহর স্বজনরা।ঘটনাটি লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে পুলিশের সরনাপন্ন হয় রুমা আক্তারের পরিবার। জানানো হয় পুলিশকে।খবর পেয়ে ছুটে যান ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদল পুলিশ। সুরহতাল রিপোর্ট তৈরি করে মৃতদেহটি একটি নীল রঙের ম্যাজিক গাড়ীতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে।প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফোর্স প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত রুমার লাশবাহী গাড়ীটি ছিল তদন্ত কেন্দ্রের মাঠে। লাশটি যখন নিয়ে আসা হয় তখন কোন ভাবেই কান্না থামছে না মোহাম্মদের। দাদার বাড়িতে যখন উচ্চস্বরে বিলাপ করছিল মোহাম্মদ। তখন তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য স্বজনরা নিয়ে আসে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে।তার কান্নাকাটি এমন হয়ছিল যে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে ওঠে। সর্বত্রে বিরাজ করে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।তখন সে মা মা বলে চিৎকার দিলে সাথে থাকা এক আত্বীয় তাকে কুলে তুলে গাড়ীর উপর পলিথিন মোড়ানো মায়ের মৃতদেহটি দেখার চেষ্টা করে। এমন দৃশ্যটি ক্যামরা বন্দী করেন ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক লিটনুর রহমান জয়।পরে তার পেইজবুক থেকে তিনটি ছবি আপলোড দিয়ে লিখেন পিতার দেওয়ার আগুনে মা পুড়ে লাশ! পলিথিনে মোড়ানো গাড়ীতে রাখা সে লাশ”কে মা-মা বলে ডাকছে অবুঝ সন্তান। মুহুর্তের মধ্যে ছবি ও স্ট্যাটাসে শোক ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও মন্তব্য করেন অনেকেই। ১০ মিনিটে মধ্যে ভাইরাল হয়ে ওঠে ছবিটি।দেশের শীর্ষ অনলাইন গুলোতে স্থান পায় এই ছবিটি। লাখের উপর শেয়ার আর কমেন্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারী। অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবী করে হাজার হাজার লোক।নিন্দা জানান অগনিত পাঠক। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হয়ে পড়ে ছবিটি।হৃদয়ে রক্তক্ষরন হচ্ছে অনেকের। বিবেক নাড়া দিয়েছে সকলের।সাধারণ মানুষের মন্তব্য বিবেচনা করে দেখা গেছে, সকলই খুনি চক্রের বিচার যাতে অল্প সময়ে হয় সেদিকে নজর রাখার তাগিদ দিয়েছে।