এমএ সাত্তার

সভ্যতার নিয়ামক উপাদান পৃথিবীতে চারটি জিনিস। এক. শক্তি, দুই. প্রাকৃতিক সম্পদ, তিন. প্রেম-প্রীতি ভালবাসা, ও চার. তথ্য। এই চারটি উপাদানের মধ্যে প্রথম তিনটি ক্ষয়িষ্ণু। বলা যায় এগুলো কমছে। শক্তির বিকল্প আরেক শক্তি খুঁজছে। প্রাকৃতিক সম্পদের একটি বিকল্প আরেকটি খুঁজছে। প্রেম-প্রীতির বিকল্প না জানলেও তা কমছে, বাড়ছে হানাহানি। কিন্তু তথ্য বাড়ছে। বেড়ে চলছে ঘাতক সূচক হারে।এই তথ্যর নিয়ন্ত্রণ হলো গ্রন্থাগার। জ্ঞান ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তথ্যকে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে তোলে গ্রন্থাগার। সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি প্রাচীনকাল থেকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। তবে প্রাচীনকালে গ্রন্থাগার নামক প্রতিষ্ঠানটি মূলত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এ দুটি উদ্দেশ্যেই গড়ে উঠত বলা যায়। বর্তমানে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বিতরণ এ তিনটি শব্দের সমন্বয়ে গ্রন্থাগার এখন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান। চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোন প্রতিষ্ঠান নয়।
দেশের উন্নতি, জাতির উন্নতির ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার চর্চার বিকল্প কোন ক্ষেত্র নেই। যে জাতি যত বেশি গ্রন্থাগার চর্চা করছে সে জাতি তত বেশি উন্নত। কারণ- গ্রন্থাগার হচ্ছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন প্রতিষ্ঠান। Herbert Samuel /হারব্রাট সামোয়েল নামে একজন Herbert Samuel /হারব্রাট সামোয়েল এর মতে ‘A Library is thought in cold storage /এ লাইব্রেরী ইজ ট্রউথ ইন কোল্ড স্ট্রোজ, তাই বলা যায় গ্রন্থাগার নামক প্রতিষ্ঠানটিকে আমাদের জাতীয় চেতনার সঙ্গে যুক্ত না করতে পারলে বর্তমান তথ্যসমৃদ্ধ জ্ঞানজগতে আমরা অধরাই থেকে যাব। আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি প্রায় ৪৬ বছরের বেশি। গ্রন্থাগারকে জাতীয় চেতনার সঙ্গে ইতোপূর্বে সম্পৃক্ত করা হয়নি। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তথ্যপ্রযুক্তির দিক-নির্দেশনায় জাতির সামনে ভিশন-২০২১ তুলে ধরেছে। রূপকল্পের এ বাস্তবায়নে ধারাবাহিক ক্ষমতায় বর্তমান সরকার দেশকে নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত করেছে। বিভিন্ন সেক্টরে তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে ২০৪১ সালে উন্নত জাতিতে পরিণত করার স্বপ্নে সরকার বিভোর। এ লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন সেক্টরে বা ক্ষেত্রের সঙ্গে গ্রন্থাগার নামক প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়ভাবে জাতির সামনে নিয়ে এসেছে। বর্তমান সরকারের ঘোষণা মতে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি পালিত হবে। বাংলাদেশে গ্রন্থাগার তথা গ্রন্থাগার পেশার জগতে এ ঘোষণা যুগান্তকারী ও মাইলফলক বলা যায়। ভারতের গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের জনক শিয়ালি রামা মিত্র রঙ্গনাথন। গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে তার অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং ভারতে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ১২ আগস্টকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। জাতীয় এ দিবসটি ভারতে গ্রন্থাগার পেশাকে ত্বরান্বিত করার জন্যই। ভারতে গ্রন্থাগার পেশার সেবা কত উন্নত তা আমরা সবাই জানি। তেমনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশে লাইব্রেরি দিবস বা সপ্তাহ পালন করা হয়।
আমাদের দেশে গ্রন্থাগার পেশার জগতে গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের অধীনে গণগ্রন্থাগার পাবলিক লাইব্রেরী হচ্ছে সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার, প্রতি বিভাগ ও জেলায় গণগ্রন্থাগার সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত। তাছাড়া বেসরকারী গণগ্রন্থাগারের সেবা সারাদেশে অসংখ্য বলা যায়। এই গণগ্রন্থাগার (পাবলিক লাইব্রেরী) বাংলাদেশে গ্রন্থাগার পেশার জগতে অনন্য প্রতিষ্ঠান। গ্রন্থাগার পেশার উন্নয়নে এ দেশে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ও অনস্বীকার্য। এই গণগ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ঢাকায় ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। এ দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বা গুরুত্ব দিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো যে, জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণার ক্ষেত্রে কার্যকর অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর। উল্লেখ না করলেই নয়, অধিদফতরের বর্তমান কর্ণধার হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব, মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার তার কার্যকর অগ্রণী ভূমিকার জন্য এ দিবসটি ঘোষণার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-২০১৯ সফল হোক, এ কামনা করছি।