জাহাঙ্গীর আলম শামস্
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বৈদ্যরছড়া পাতাবাড়ি এলাকা থেকে অষ্টম শ্রেণির এক মাদ্রাসার ছাত্রীকে অপহরণের পর জোর পূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে ওই ছাত্রী। ভিকটিম বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঘটনাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম।
ভিকটিমের বরাত দিয়ে ভুক্তভোগি পরিবার জানিয়েছে, ভিকটিম স্থানীয় বৈদ্যরছড়া পাতাবাড়ি এলাকার একটি মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিনের মতো সে গত বুধবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়। মাদ্রাসায় না পৌঁছানোর আগেই দু’জন যুবক ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক সিএনজি টেক্সীতে তুলে অপহরণ করে কক্সবাজারের একটি কটেজে নিয়ে আসে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের একদিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে সিএনজি টেক্সী নিয়ে ওই ছাত্রীকে নিজ এলাকায় ফেলে দিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। দুপুরে বাসায় ফিরে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই ছাত্রী। পরে থাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

ভিকটিমের বড় ভাই আব্দু রহিম বলেন, যা হয়েছে সব আমার বোনের মুখ থেকে শুনেছি। দুইজন যুবক অপহরণ করে এই ধরণের অসামাজিক কাজে জড়িত রয়েছে। তবে এই দুই যুবক কারো পরিচিত নন। আমার বোনও তাদের চিনতে পারছে না। এই অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আমার বোন।

তিনি আরও বলেন, নিখোঁজ হওয়ার দিন সবজায়গায় খুঁজেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরও অবগত করেছি।
ভিকটিমের মা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে একটি মোবাইল নাম্বার থেকে নয়ন পরিচয় দিয়ে বারবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তার মেয়ের নামে মন্দ কথা বলে কিছু না করার জন্য বারবার হুমকি দিচ্ছে। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মো. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, বিষপান করায় ওই ছাত্রী গত বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালের ৪র্থ তলায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তবে ওই ছাত্রীর মা জানিয়েছে, তার মেয়েকে যৌন হয়রাণি করেছে। এতে অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মায়ের এমন কথায় শনিবার বেলা ১২ টার দিকে ওই ছাত্রীকে ৪র্থ তলার মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের ওয়ান স্টোপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পরীক্ষা ও আলামতের জন্য রেফার করা হয়।
যৌন হয়রাণির বিষয়ে ওসিসি’তে সকল পরীক্ষা ও আলামত নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। রিপোর্ট পেলেই বুঝা যাবে যৌন হয়রাণি হয়েছে কিনা। তবে বিষপান করেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর পুনরায় সাধারণ ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়েছে ওই ছাত্রীকে।

হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম কক্সবাজার জেলা কমিটির সদস্য সাংবাদিক এ এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তারা খুবই অসহায়। সোনাইছড়ি পাতাবাড়ি গ্রামের ভিতরে তাদের বসবাস। অস্বচ্ছল পরিবার। ভয়ে পরিবারটি কারো সাথে কথাও বলছে না। নিয়মিত হুমকিও শিকার হচ্ছে তারা । কক্সবাজার হাসপাতালের আনাচে-কানাচেও তারা চিনেনা। থানা পুলিশ বা কোথায় সহযোগিতা পাই এসব বিষয়েও জানেন না। এমন একটি পরিবারের মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণ করা খুবই মর্মান্তিক বিষয়। সবাইকে এবিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

এবিষয়ে হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম কক্সবাজার জেলা কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বাহাদুর বলেন, বিষয়টি খুবই দু:খজনক।
ভিকটিমকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম ওই ছাত্রীকে। তার অবস্থা খুবই খারাপ। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মেয়েটি ও তার পরিবারকে আইনগত যেসব সহযোগিতা করা প্রয়োজন আমরা তা করবো। এবিষয়ে প্রশাসনকেও অবগত করা হয়েছে।