নিউজ ডেস্ক:
ব্রিটেনে প্রতি বছরই জন্ম নেয়া শিশুদের মধ্যে ছেলে বাচ্চার সংখ্যা মেয়ে বাচ্চার চেয়ে বেশি। রানি ভিক্টোরিয়ার সময় থেকে এমন কোনো বছর নেই যেখানে মেয়ে শিশু বেশি জন্মেছে। উদাহরণস্বরূপ ২০১৭ সালে ব্রিটেনে মেয়ে শিশু জন্মেছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫ জন। এর মধ্যে ছেলে শিশু জন্মেছে প্রায় ১৭ হাজার বেশি-মোট ৩ লাখ ৮ হাজার ৭১ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাব মতে, সদ্য জন্মানো শিশুদের মধ্যে প্রাকৃতিক জেন্ডার অনুপাত হলো প্রতি ১০০ মেয়ে শিশুর বিপরীতে জন্ম নিচ্ছে ১০৫ ছেলে শিশু। সারা পৃথিবীতেই এ অনুপাত মোটামুটি একই। শুধু চীন বা ভারতের মতো কিছু দেশ ছাড়া। কারণ সেখানে পিতামাতার কাছে ছেলে শিশু অধিক কাঙ্ক্ষিত বলে মনে করা হয়।

কিন্তু ঠিক কী কারণে ছেলে শিশু বেশি জন্মায়-তা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা। তাই এ নিয়ে একাধিক তত্ত্ব আছে। প্রথম তত্ত্বটা হলো: পুরুষ হিসেবে বেড়ে ওঠাটাই একটা বিপজ্জনক ব্যাপার। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই তার অল্প বয়সে মারা যাবার সম্ভাবনা মেযেদের চাইতে বেশি। সেটা হতে পারে তা দুর্ঘটনা, ঝুঁকি নেয়া, আত্মহত্যা বা স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা এমন যেকোনো কারণে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড স্টাইনজালৎস বলছেন, যেকোনো স্থান-কাল-পাত্রেই পুরুষের মারা যাবার ঝুঁকি নারীর চেয়ে বেশি। তাই বিবর্তনের নিয়মেই পুরুষ শিশুর জন্ম বেশি হচ্ছে যাতে শেষ পর্যন্ত পরিণত বয়সে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় একটা সমতা থাকে।

সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে, সেটা নির্ধারণ হয় যেভাবে

সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় পুরুষের শুক্রাণু থেকেই-এ কথা হয়তো অনেকেই এখন জানেন। নারীর ডিম্বাণুকে নিষিক্তকারী শুক্রাণুটি যদি ওয়াই ক্রোমোজোম বহনকারী হয়, তাহলে সন্তান হবে ছেলে। আর সেই শুক্রাণু যদি এক্স ক্রোমোজোম বহনকারী হয় তাহলে সন্তান হবে মেয়ে।

এখন কোটি কোটি শুক্রাণুর মধ্যে নিষিক্তকরণের প্রতিযোগিতায় কোনটি জয়ী হবে-তা নির্ভর করে পিতামাতার বয়সে, নারীর ঋতুচক্র, মানসিক অবস্থা, খাদ্য, এমনকি কোন ভঙ্গিতে তাদের যৌনমিলন ঘটছে তার ওপর।

বলা হয়, ওয়াই ক্রোমোজোমবাহী পুরুষ শুক্রাণু জরায়ুর ভেতর বেশি সময় বাঁচে না কিন্তু তারা দ্রুত ছুটতে পারে। অন্যদিকে নারী শুক্রাণু ধীরগতিতে চলে কিন্তু বাঁচতে পারে বেশি সময়। তাই জনপ্রিয় একটি তত্ত্ব হলো : নারীর ঋতুচক্রের কোন সময়টায় দম্পতি কতবার মিলিত হচ্ছেন এবং কতদিন বিরতি দিচ্ছেন-তার ওপর নির্ভর করে সন্তান মেয়ে না ছেলে হবে।

নারীর ডিম্বস্ফোটন বা ওভুল্যুশনের ঠিক আগে বা পরে যৌনমিলন হলে যে শুক্রাণুগুলো দ্রুত ছুটতে পারে তারাই ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারে এবং ছেলে সন্তানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর বিপরীতটা হলে অর্থাৎ ওভুলেশনের কয়েকদিন আগে একাধিকবার যৌনমিলন হবার পর কয়েকদিন বিরতি দিলে কন্যাসন্তানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কিন্তু অভিভাবকরা যাই বলুন, বিজ্ঞানীরা অবশ্য মনে করেন এসব পরিকল্পনা করে যৌনমিলন করেও ফলাফলে বিশেষ কোনো পার্থক্য হয় না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা-মা যদি মানসিক চাপে থাকেন তাহলে মেয়ে শিশু জন্মের সম্ভাবনা বাড়ে।

অন্যদিকে যুদ্ধ বা সংঘাতের মধ্যে যে বাবা-মায়েরা বাস করছেন তাদের ছেলে সন্তান বেশি হতে পারে। প্রশ্ন হলো- এ রকম পরিকল্পিত যৌনমিলনে যদি কাজ না-ই হয়, তাহলে কি আসলে গর্ভাবস্থার সময় অন্য কিছু ঘটছে?

বিজ্ঞানীরা বলেন, কিছু গবেষণায় আভাস পাওয়া গেছে যে, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কন্যা ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যাবার ঝুঁকি বেশি। কিন্তু অন্য কিছু জরিপে দেখা গেছে, গর্ভাবস্থার শেষদিকে পুরুষ ভ্রুণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে এবং এর ফলে মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে, আসলে গর্ভকালীন সময়ে ঠিক কী ঘটে এবং কেন ঘটে তা নির্ভূলভাবে বলা খুবই কঠিন। মোটের ওপর, আমরা এটাই দেখি যে, ছেলে ভ্রুণই পরিণত অবস্থা পর্যন্ত বেশি পৌঁছায় এবং ছেলে শিশুর জন্মই বেশি হয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা