-সৈয়দ আবদুর রহমান

বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজের অনিয়ম, স্বেচ্চারিতা ও দুর্নীতির কথা সর্বজনবিদিত। রোগীদের সময় না দেয়া, ভিজিট ও রিপোর্ট দেখার নামে অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাত, অপ্রয়োজনী টেস্ট দেয়াসহ বিস্তর অভিযোগ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। এই কারণে ডাক্তারদের প্রসঙ্গ উঠলেই এদেশের মানুষ জিহ্বায় কামড় বসায়। পত্রিকার খুললে ডাক্তারদের এসব খবরা-খবর নিত্য চোখে পড়ে। তবে সব ডাক্তার বা চিকিৎসক যে একই চরিত্রের নয় তা প্রমাণ করেছেন কক্সবাজার জেলার স্বনাম ধন্য একজন মেডিকেল অফিসার ডা.শংকর বড়ুয়া। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, সদর হাসপাতালের সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জেলার একমাত্র হরমোন (ডায়াবেটলজী ও বাত রোগ) বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.শংকর বড়ুয়ার মানবতাবাদি চিকিৎসা সেবা ও মহানুভবতার কথা জেলার বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষের কানে কানে এখন।

ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হওয়ার অনেকগুলো কারণ উনার। ১১/১২লক্ষ রোহিঙ্গা অধ্যুসিতের কারণে জেলা ও উপজেলা শহরের হাসপাতালগুলো সব ধরণের ডাক্তারদের জন্য উন্নত উর্বর ভূমি আমাদের এই কক্সবাজার। আর প্রচারিত বিলবোডে বিদেশ ফেরত বাহারি ডিগ্রী লিখে ফেলতে পারলেতো কথাই নেই। একারণে এখানকার বিশেষজ্ঞ নামধারি কোনো কোনো চিকিৎসক রাতারাতি হয়ে যাচ্ছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের মত। কারণ, জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসক সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় প্রতিদিন যে কোনো ডাক্তারদের চেম্বারে রোগীদের ভিড় বাড়ছেই। রোগীদের ভিড়ের কারণে তারা একেকজন নিজেদেরকে মনে করছেন জনপ্রিয় ডাক্তার। অথচ তারা জানেন না পাছে তাদের প্রতি মানুষের অবিজ্ঞতা কত ভয়াবহ তিক্ততায় ভরা। তবু মানুষ কোনো উপায় না দেখেই এসব ডাক্তারদের দারস্থ হচ্ছে। এই সুযোগে গরীব-অসহায় মানুষের জালি খুলে সারছেন এসব ডাক্তাররা। ডাক্তার ফিঃ,সিরিয়াল ফিঃ, এই পরীক্ষা সেই পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছেন অসংখ্য বিশেষজ্ঞ বিশেষণধারি ডাক্তার। এই ক্ষেত্রে একজন ব্যতিক্রম ধর্মী চিকিৎসক হচ্ছেন ডা.শংকর বড়ুয়া স্যার। তাঁর চেম্বারেও সবসময় রোগীদের প্রচন্ড ভিড় থাকে। উনার চেম্বারে অপেক্ষমান রোগীদের কয়েকজনের নিকট থেকে স্যারের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তারা সবাই একবাক্যে বলেন, আমরা অসুস্থ হলে শংকর স্যারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকি। স্যার ফিসের টাকার জন্য আমাদেরকে তেমন বেশি চাপাচাপি করেন না। আর ভিজিটও অন্য ডাক্তারদের মত অতিরিক্ত নেন না। আমাদের টাকা থাকলে দিই, না থাকলে দিই না এবং স্যারও নেন না। এছাড়াও কারো ঔষধের টাকা না থাকলে তাকে স্যার নিজের পকেট থেকেই টাকা দেন ঔষধ কেনার জন্য। সচেতন একজন রোগীর অভিভাবকের কাছ থেকে স্যারের চিকিৎসাসেবার মান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, একজন রোগীকে দীর্ঘসময় ব্যয় করে দেখার জন্য স্যার সহজে রোগ সনাক্ত করতে সক্ষম হন। ফলে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পেয়ে থাকেন এবং সুস্থ হয়ে উঠেন। আর প্রয়োজন ছাড়া অযথা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েও হয়রানি করেন না তিনি। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আরেকজন মেডিকেল অফিসার ও জেলার জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা.মুহাম্মদ শাহজানের মুখ থেকেও প্রসঙ্গক্রমে একদিন ডা.শংকর বড়ুয়ার ব্যাপক প্রশংসা করতে শোনেছি। বাংলাদেশের ডাক্তারদের প্রশ্নবিদ্ধ চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করতে হলে দেশের প্রত্যেক চিকিৎসককে ডা.শংকর বড়ুয়া স্যারের মত উদার ও মানবতাবাদি হতে হবে। ডা.শংকর বড়ুয়াকে জেলার গণমানুষের ডাক্তার বলে আখ্যায়িত করে থাকেন এখানকার গরীব দুস্থ অসহায় মানুষেরা। আমরা চাই গণমানুষের জয় হোক এবং শংকর বড়ুয়ার মত মানবতাবাদি চিকিৎকদের সংখ্যায় ভরে উঠুক এই দেশ এই ধরা।

লেখক: কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক, ঈদগাঁও, কক্সবাজার।