মোঃ ফারুক ,পেকুয়া :
কক্সবাজারের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মাতবর পাড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মরহুম জহির আহমদের পুত্র এস.এম শাহাদত হোসেন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। কলেজ, ইউনিয়ন ও উপজেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে সদর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়ে অল্পভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এরপর উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সু-সংগঠিত করে তৃণমূলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একপর্যায়ে জেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য হিসাবে মনোনীত হন। সর্বশেষ তাকে পেকুয়া উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দেন জেলা কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ আনসারী। এছাড়াও তিনি বরইতলি-মগনামা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন শাখার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের জড়িত থেকে সমাজসেবা ও বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় গ্রহণযোগ্যতা পায় সমাজের প্রতি শ্রেণীর মানুষের কাছে। হয়ে উঠে পরিচিত মুখ।
কিন্তু সম্প্রতি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকার পক্ষে ও বিএনপি-জামায়াত এর নাশকতা রুখতে যখন তিনি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন, ঠিক তখনি দূর্বৃত্ত কর্তৃক অতর্কিতভাবে উপর্যপুরী ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হতে হয় তাকে। সেই মারাত্মক ক্ষত নিয়ে গত ৬দিন ধরে মূর্মুর্ষ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পেকুয়া থানা সংলগ্ন চৌমহুনীস্থ ষ্টেশনে তার উপর এ হামলা হয়।
চিকিৎসাধীন শাহাদাতের ভাই সানাউল হক মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ভাই শাহাদত হোসেন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে। শরীরে সম্মুখভাগে ৫টি ছুরির আঘাত রয়েছে। ঘাড়ে রয়েছে আরো একটি ছুরির আঘাত। ভাইয়ের উপর দূর্বৃত্তরা এমনভাবে ছুরিকাঘাত করেন পেটের ভুরি পর্যন্ত বের হয়ে যায়। ছুরির আঘাতে মেরুদন্ডে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। মহান আল্লাহ সহায় ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ভাইকে তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসতে না পারলে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হত না। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। ডাক্তাররা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
এদিকে হামলার ৬দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করেনি বলে অভিযোগ জানান শ্রমিকলীগ নেতা শাহাদাতের অপর ভাই ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা আপেল মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমার পিতা মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। আমাদেরকে মুজিব আদর্শে লালিত করেছেন। পিতা আদর্শে ভাই শাহাদত হোসেন মুজিব আদর্শের একনিষ্ট সৈনিক। বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সাথে লড়াই করে গেছেন সবসময়। বর্তমানে সিএনজি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাসে কোন দিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি। এটিই যেন কাল হয়ে দাড়ালো তার জন্য। সিএনজি শ্রমিক সংগঠনের অপর একটি পক্ষ বিভিন্ন সময় তার উপর হামলার চেষ্টা করে আসছিল। এছাড়াও চৌমহুনীস্থ মাদক ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপের বিরুদ্ধে সবসময় সরব ছিলেন তিনি। আওয়ামী রাজনীতির নাম ভাঙ্গিয়ে যারা অপকর্ম করে যাচ্ছিল, তাদের বিরুদ্ধেও ছিণ তার অবস্থান। তাই অপরাধীরা চেয়েছিল আমার ভাইকে চিরতরে সরিয়ে দিতে। সিএনজি সংগঠনের ওই পক্ষটির সাথে চৌমহুনীস্থ মাদক ব্যবসায়ীরা হাত মিলিয়ে আমার ভাইকে হত্যার মিশন চালিয়েছে। ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছিল।
তিনি আরো বলেন, হামলার পরদিন জড়িতদের বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় এজাহার দায়ের করি। কিন্তু আসামীর নামের তালিকা দেখে কয়েকজনকে বাদ দিতে বলা হয় থানা পুলিশের পক্ষ থেকে। আমরা তাও করেছি। তারপরও এখন পর্যন্ত মামলা রেকর্ড না হওয়ায় আমরা চরমভাবে হতাশ এবং নিরাপত্তাহীন। এদিকে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে আমার ভাইয়ের উপর হামলাকারীরা। ঘরে বৃদ্ধা মা সবসময় ভাইয়ের জন্য চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বারবার জিজ্ঞেস করেন হামলাকারীরা কেন ধরা পড়ছেন না। এ প্রশ্নের কোন উত্তর আমার কাছে নাই। এছাড়াও সংঘবদ্ধ দূর্বৃত্তরা মামলার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ওই মাদক ব্যবসায়ীদের মালিকনাধীণ একটি দোকান নিজেরা ভাংচুর করে। ওই মিথ্যা ঘটনাকে পুজি করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলার করার পায়তারা চালাচ্ছে।
এব্যাপারে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ভোক্তভূগীর পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দেওয়া হয়েছে। এজাহারে উল্লেখিত আসামীদের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা ব্যাপারে যাচাই বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শ্রমিকলীগ নেতা শাহাদাতের প্রকৃত হামলাকারীদের আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।