আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থাকাসহ নানামুখি প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং ও তৃণমুল পর্যায়ে বাল্য বিবাহ ও পারিবারিক বিরোধ নিরসনে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে কমেছে সামাজিক অপরাধের সংখ্যা। গত অক্টোবর মাসে রাঙামাটি জেলায় পুলিশের সার্বিক কর্মকান্ড পর্যালোচনায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। জেলা পুলিশের মাসিক রিপোর্টের তথ্যানুসারে জানাগেছে, অক্টোবর মাসে রাঙামাটির সবগুলো থানা মিলে মাত্র ৩২টি মামলা দায়ের হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের অভিযানে সর্বমোট ১৮৭ জন আসামী গ্রেফতার হয়েছে। যার মধ্যে থানায় দায়েরকৃত তথা জি-আর মামলায়-৯৯ জন, সি-আর মামলায় ওয়ারেন্ট তামিলে-৫০ জন, সাজাপ্রাপ্ত আসামী-২০ জন, মাদকের মামলায় (ইয়াবা ও মদ)-১৬ ও অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২ জনকে। পুলিশের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, একমাসে রাঙামাটিতে সাড়ে তিনশো পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫শ লিটার চোলাই মদ জব্দ করার পাশাপাশি একটি ২২ বোর রাইফেল ও ৭৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তারমধ্যে এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২০টি মাদকের, একটি অস্ত্র মামলাসহ বাকি ১১টি সাধারণ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে।
রাঙামাটি কোতয়ালী থানা সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরে পুরো মাসে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে চালিয়ে সাজাপ্রাপ্তসহ আসামীসহ গতমাসে গ্রেফতার করা হয়েছে সর্বমোট ৫৯ জনকে, তারমধ্যে ওয়ারেন্ট তামিল করা হয়েছে ৩৯টি, অন্যান্য মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২০জনকে।
কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহিদুল হক রনি উপরোক্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, অক্টোবর মাসে আমাদের কোতয়ালী থানায় মোট মামলা রুজু হয়েছে ১৯টি, তারমধ্যে মাদকের মামলা দায়ের হয়েছে ১২টি, এসব মামলার বিপরীতে আটক করা হয়েছে ১১জনকে। জনাব রনি জানান, আমাদের কোতয়ালী থানার পক্ষ থেকে স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করে তাদের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে মাদকের অবাধ ব্যবহার বন্ধে করনীয় নির্ধারনে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময়, আলোচনা সভা কর্মসূচী চলমান রাখা হয়েছে। এতে করে আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে ছোঠোখাটো সমস্যাগুলো সমাধানে উৎসাহিত করার সুবাধে থানায় সামাজিক অপরাধের অভিযোগ অনেকটাই কমে এসেছে।
এদিকে, বাঘাইছড়ি থানায় গত ১ মাসে একটি মাত্র সাধারণ মামলা দায়ের হয়েছে উল্লেখ করে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমির হোসেন জানিয়েছেন, আমরা গত মাসে বাঘাইছড়িতে ২ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ সর্বমোট ৯জন ওয়ারেন্টভূক্ত আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি।
এছাড়াও ২৭ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করেছি। জনাব আমির হোসেন জানান, সীমান্তবর্তী উপজেলা বাঘাইছড়িতে সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা মাদক, বাল্য বিবাহ বন্ধে ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও পাবলিক প্লেসগুলোতে নিয়মিতভাবেই মতবিনিময়-আলোচনা সভা করে যাচ্ছি। যার ফলশ্রুতিতে অত্রাঞ্চলে বর্তমানে অপরাধের সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে।
জেলার সার্বিক অপরাধের চিত্রনিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলে রাঙামাটির পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির জানিয়েছেন, প্রার্ন্তিক জনগোষ্ঠির বসবাসকৃত পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার প্রত্যয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিংসহ মতবিনিময়-আলোচনা সভার মাধ্যমে জনগণের দৌড়গৌড়ায় পুলিশের সেবা পৌছে দেওয়ার চেষ্ঠা চলছে।
এই ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে জেলায় যেমনিভাবে বাল্যবিবাহ বন্ধকরণ, পারিবারিক বিরোধ নিরসন ও সামাজিক ছোট-খাটো সমস্যাগুলো স্থানীয়ভাবেই নিরসন করা হচ্ছে তেমনিভাবে অত্যন্ত কঠোর এক্কেবারে জিরো টলারেন্স নীতিতে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। এরই সুফলতায় রাঙামাটি শহরে সামাজিক অপরাধ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, অন্যতম পর্যটন শহর রাঙামাটিকে একটি সুন্দর নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে হয়ে এখানকার বাসিন্দাদেরকেই সর্বাজ্ঞে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে তাদেরকে বয়কটসহ অপরাধ সংঘঠনকারি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গণহারে প্রতিরোধ গড়ে তুললে পাহাড়ি এই জেলায় সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।