এস.এস রুবেল

– গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় নিয়ে ছোট্ট তানিশা মনি সকালবেলা স্কুলে গেল। সে মহেশখালী সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণীতে পড়ে। স্কুল ছুটির পর প্রতিদিনের ন্যায় বাড়ি ফিরছিল সে। স্কুলের সামনে সড়কের পাশ ধরে হেঁটে যেতেই একটি টমটম গাড়ী শিশুটিকে এসে ধাক্কা দেয়। মুহুর্তেই ঘটে গেল একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা। রক্তাক্ত শিশু তানিশার দেহ। তখন রাস্তার একপাশে পড়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে শিশুটি।

– শিশুটিকে উদ্ধার করে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। শিশুটির পরনে থাকা ছিঁড়া ইউনিফর্মটি খুলে ফেলতেই আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে গেলেন। দুর্ঘটনার সময় টমটম গাড়ীর লোহায় অাঘাত পেয়ে শিশু তানিশার পেটের বামপাশে গর্তের মত ছিদ্রের সৃষ্টি হল। ঐদিক দিয়ে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এছাড়াও হাতে পায়ে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। ততক্ষণে খবর পেয়ে শিশুটির মা-বাবা হাসপাতালে হাজির হল। হাসপাতালের বেড়ে রক্তাক্ত সন্তানকে শুয়ে থাকতে দেখে চটপট করছিল তারা। তাদের বুকফাটা চিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে গেল।

– ডাক্তার সাহেব দ্রুত প্রাথমিক ভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধের ব্যবস্থা করে শিশুটিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তখন শিশুটির নিষ্পাপ দুটি চোখ সবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ডাক্তার যখন শিশুটিকে ইনজেকশন পুঁশ করছিলেন তখন কান্নাজড়িত কন্ঠে শিশুটি বলল, “ডাক্তার আমি যেন আর ব্যথা না পাই”। এটা শুনে আশপাশ সবার চোখে জল এসে গেল। ব্যথার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে নিষ্পাপ একটি শিশুর আকুতি কতই বেদনাদায়ক ও কষ্টকর তা সামনে থাকলে বুঝা যায়।

 প্রতিদিন মহেশখালীতে গড়ে ২/৩টি ছোট বড় টমটম দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, অদক্ষ চালক দ্বারা টমটম চালিত হওয়ায় দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। প্রায় ১৫/২০ জনের অধিক টমটম চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই টমটম চালানোর পূর্বে কেউ বেকার ছিলেন আবার কেউ লবন শ্রমিক, দিন মজুর, পানের বরজ, মাছের প্রজেক্ট, ব্যবসা সহ ইত্যাদি পেশায় জড়িত ছিলেন। কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করেই বর্তমানে তারা সড়কে টমটম চালাচ্ছে। তাদের মত সবাই প্রশিক্ষণবিহীন ড্রাইভার। ট্রাফিক আইনের নিয়মকানুন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেই অনেকেই এই সম্পর্কে জানেন না বলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই যদি হয় গাড়ী চালকদের অবস্থা সেখানে দুর্ঘটনা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু প্রতিদিন এই দুর্ঘটনায় হারাচ্ছি আমাদের কারোনা কারো অাপনজনদের। হিসেব নেই আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে আরো কতজন? জানিনা কখন শেষ হবে এই পরোক্ষ খুনের মত জঘন্য অপরাধকার্য….???